চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালকের দুর্নীতি ও অবৈধ কার্যক্রমের বিচার দাবি সাহিত্যকর্মী-সচেতন মহলের

reporter / ১২২ ভিউ
আপডেট : সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতের গত দশ বছরে অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি এবং অবৈধ উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনার বিচার ও উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন চাঁদপুরে সাহিত্যকর্মী ও সচেতন মহল।
সমাজে ভালো মানুষের লেবাস পরে চাঁদপুরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে স্বৈরাচারী কায়দায় নিয়ন্ত্রণ করা এই অসাংগঠনিক, প্রতারক দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে অবিলম্বে মামলা করার দাবি উঠেছে চাঁদপুরের সব মহল থেকে।
চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর গঠনতন্ত্রের অধ্যায় সাত এর ৩০ এর উপ- ধারা (১) এর (ক) তে উল্লেখ আছে “প্রতি বছর সাহিত্য একাডেমির সাধারণ পরিষদের সভা কমপক্ষে একবার অনুষ্ঠিত হইবে। ” (খ) বার্ষিক সাধারণ সভা প্রতিবৎসর ১০ ই চৈত্রের মধ্যে অনুষ্ঠিত হইবে। (খ) বার্ষিক সাধারণ সভায় বিগত বৎসরের কার্যক্রমের উপর আলোচনা এবং পরবর্তী বৎসরের কার্যক্রমের দিক নিদর্শনা প্রদান করিবে। (ঙ) এই সভা একাডেমীর পরবর্তী বৎসরের বাজেট অনুমোদন করিবে। (চ) এই সভা বিগত বৎসরের আয় ব্যায়ের হিসাব অনুমোদন করিবে।”
অথচ সাবেক অবৈধ মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত গত দশ বছরে সাহিত্য একাডেমীর সাধারণ পরিষদের একটি সভাও করেননি! এবং সাহিত্য একাডেমী প্রত্যেক বছরের আয়-ব্যয় হিসাব সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে বার্ষিক সাধারণ পরিষদের সভায় কখনো অনুমোদন করান নি।
সাবেক এই অবৈধ মহাপরিচালক চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির গঠনতন্ত্রের অধ্যায় সাত এর ৩০ এর উপ- ধারা( ১) এর (ক,খ, ঙ, চ ) অনুসরণ এবং প্রতিপালন না করে একাডেমীর বিগত ১০ বছরে লাখ লাখ টাকা দুর্নীতি ও আত্মসাৎ করেছেন মর্মে প্রতিয়মান হচ্ছে। ব্যাংকে থাকা সাহিত্য একাডেমীর এফডিআর লাখ লাখ টাকার সঠিক হিসাব নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে তিনি তার অনুগত সাহিত্য একাডেমীর অফিস সহকারি মোঃ মাসুদকে নিয়ে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে বিগত দশ বছরের নয়ছয় মার্কা হিসাব মিলাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়া পর চাঁদপুরের সাহিত্যকর্মী ও সচেতন মহলের পক্ষ থেকে সাবেক অবৈধ মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতের বিরুদ্ধে এখনই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।
কাজী শাহাদাতের গত দশ বছরের অনুমোদনবিহীন ভুয়া ভাউচারের সকল হিসাবকে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি হিসেবে গণ্য করে দ্রুত মামলা করার জন্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও সাহিত্য একাডেমীর সভাপতিকে সাহিত্যকর্মীরা অনুরোধ করেছেন।
সরকারের বর্তমান খাদ্য সচিব এবং সাবেক জেলা প্রশাসক ও চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি ইসমাইল হোসেন এর সভাপতিত্বে গত ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রিঃ তারিখের বার্ষিক সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধন সাপেক্ষে কাজী শাহাদাতকে সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি মহাপরিচালকের ক্ষমতার মসনদে বসে গঠনতন্ত্র সংশোধনের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন। তিনি গঠনতন্ত্র সংশোধন করে গত দশ বছরেও মহাপরিচালকসহ চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর নির্বাহী পরিষদকে বৈধতা দেননি। অথচ কাজী শাহাদাত নিজে অবৈধ মহাপরিচালক হয়ে সাহিত্য একাডেমীর সভাপতির জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ এর গত ২৪ মে ২০২২ খ্রিঃ তারিখের করা এডহক কমিটিকে অবৈধ বলছেন। তার এধরনের আচরণকে চরম ধৃষ্টতা হিসেবে দেখছেন সবাই।
চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর গঠনতন্ত্রের ৩৫ এর (ক) উপ- ধারায় উল্লেখ আছে ” নির্বাহী পরিষদের মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী বৎসরের বার্ষিক সাধারণ সভায় তিন সদস্য বিশিষ্ট (একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুই জন সদস্য ) একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হইবে। কমিশন নির্বাচন বিধি প্রনয়ণ ও নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করিবেন এবং ফলাফল প্রকাশ করিবেন।” (খ) নির্বাহী পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কমপক্ষে ৬০ ( ষাট) দিন পূর্বে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন বিধি প্রণয়ন করিবেন। এবং নির্বাহী পরিষদের অনুমোদন করাইয়া লইবেন। উল্লেখিত নির্বাচন বিধি নির্বাচন বিজ্ঞপ্তির সাথেই প্রকাশ করিতে হইবে। (গ) নির্বাচন কমিশনের কোন সদস্যই নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারিবেন না। (ঘ) বার্ষিক সাধারণ সভায় নির্বাচন করিতে হইবে।”
কিন্তু গত ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রিঃ তারিখের বার্ষিক সাধারণ সভায় চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর গঠনতন্ত্রের ৩৫ এর (ক,খ, গ, ঘ ) উপ- ধারা অনুযায়ী তখন চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর নির্বাহী পরিষদ নির্বাচন করা হয়নি। যার জন্য তখন সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধন সাপেক্ষে কাজী শাহাদাতকে মহাপরিচালকসহ ৩ বছরের জন্য সাহিত্য একাডেমীর নির্বাহী পরিষদ করা হয়েছিল।
কিন্তু কাজী শাহাদাত মহাপরিচাকের ক্ষমতার মসনদে বসে গঠনতন্ত্রই সংশোধন না করে ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রিঃ থেকে ২৪ মে ২০২২ খ্রিঃ পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এবং স্বৈরাচারী কায়দায় চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীকে কুক্ষিগত ও জিম্মি করে রেখেছেন। সেদিন তাকে যারা মহাপরিচালক বানিয়েছিলেন তাঁদের অসম্মান করেছেন এবং নিজেসহ নির্বাহী পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের অবৈধ ও বেআইনি কথার তকমা লাগিয়েছেন। তাই  কাজী শাহাদাতের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে তার কার্যকালকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য সাহিত্যকর্মী ও সচেতন মহলের পক্ষ থেকে জোর দাবি উঠেছে।
নিজেকে স্বঘোষিত গঠনতন্ত্র বিশেষজ্ঞ দাবি করা চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত শুরু থেকেই গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনকরে অবৈধভাবে একাডেমীর মহাপরিচালকের পদে বসে ছিলেন। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীকে বিগত দশ বছর ধরে সাংগঠনিকভাবে তিনি ধ্বংস করে দিয়েছেন।
তিনি বিগত ১০ বছরে একজন সাধারণ সদস্যও সাহিত্য একাডেমীতে অন্তর্ভুক্ত করেনি। যার জন্য এই সময়ে সাহিত্য কর্মীরা বাহিরে ঘুরে ফিরে সাহিত্য চর্চা করে আসছে। সাহিত্যকর্মীদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল একাডেমী যাতে প্রতিদিন খোলা রাখা হয় এবং সেখানে যাতে সাহিত্যকর্মীদের অবাধ পদচারণা থাকে। কিন্তু গত ১০ বছরেও সেই দাবি কখনো আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে সাবেক ও অবৈধ মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত এর দায়িত্ব অবহেলা এবং ব্যর্থতার দায়ে গত ২৪ মে ২০২২ খ্রি. তারিখে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি এবং জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ গঠনতন্ত্রের ২৪ এর (ছ) উপ- ধারার ক্ষমতাবলে সাহিত্য একাডেমীর মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং অবৈধ নির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। একই দিন একাডেমীর অন্তবর্তীকালীন কার্য পরিচালনার জন্য তিনি গঠনতন্ত্রের ২৪ এর (জ) উপ- ধারা অনুযায়ী ১১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন একটি এডহক কমিটি ঘোষণা করেন। কোন প্রকার সভা বা নোটিশ ছাড়া চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর গঠনতন্ত্রে সভাপতিকে নির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা এবং এডহক কমিটি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
মেয়াদ উত্তীর্ণ, অবৈধ এবং বিলুপ্ত কমিটির মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। অথচ এক মাস অতিবাহিত হলেও সাবেক মহাপরিচালক এখনো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়নি। এবিষয়ে তাকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেই এ পর্যন্ত তাকে তিনবার নোটিশ করা হয়েছে।
এডহক কমিটি গঠনের এক মাস পার হওয়ার পরও অগঠনতান্ত্রিক ও অবৈধ সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত এখনো এডহক কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় চাঁদপুরের সাহিত্যপ্রেমী, সাহিত্যকর্মী এবং সচেতন মহলের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এর পিছনে খুঁটির জোর কোথায়? কাজী শাহাদাত নিজে অবৈধ মহাপরিচালক হয়ে এবং লাখ লাখ টাকা দুর্নীতি করে কীভাবে একজন জেলা প্রশাসকের করা এডহক কমিটিকে অবৈধ বলছেন? এনিয়ে অনেকেই আবার হাস্যরস করে বলছেন যে, একজন লোক এতটা স্বৈরাচারী দাম্ভিক ও ভুয়া হন কীভাবে! এর নেপথ্যের শক্তি এবং মাথার উপর ছায়া নিয়েও জনমনে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছ। চাঁদপুরের সাহিত্য প্রেমীদের মাঝে এনিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের দাবি অবিলম্বে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতের গত দশ বছরে অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি এবং অবৈধ উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনার বিচার করা হোক। আর না হয় সাহিত্যকর্মীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।


এই বিভাগের আরও খবর