বেড়েছে জমির দামসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান
মাহবুব আলম প্রিয়, পদ্মাপার থেকে ফিরেঃ
দেশের বৃহত্তম সেতু পদ্মাসেতুর সড়ক বিভাগের কাজ শেষ পর্যায়ে।
সরকারের ঘোষণা হিসেবে এ বছরের ২৫জুনে সড়ক অংশ খুলে দেয়ার কথা।
তবে রেল অংশের সড়ক বিভাগের কাজ বাকি থাকায় তা পরবর্তিতে খুলবে
সরকার। আর এ সেতুকে ঘিরে তৈরী হয়েছে স্থানীয়দের ব্যবসা পরিবর্তন
আর পর্যটন নির্ভর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নতুন সব আয়োজন। এতে
বেড়েছে সে অঞ্চলের জমির দাম। বেড়েছে কর্মসংস্থানের জন্য নতুন
শিল্পায়ণ। স্থানে স্থানে গড়ে ওঠছে মিল কারখানা আর পর্যটকদের
সুবিধায় অবকাশ যাপনের জন্য রিসোর্ট আর রেস্টুরেন্ট।
পদ্মাপাড় ঘুরে এসে এই প্রতিবেদক জানান, পদম্ধসঢ়; নদী পাড়ি দেয়ার জন্য
শ্রীনগর শিমুলিয়া ঘাটের জনভোগান্তি থাকায় বিগত দিনে বিলম্ব
ছাড়া কেউ বাড়ি যেতে পারতেন না। এখন সেতু খুলে দেয়া হচ্ছে এমন
খবরে স্বস্থ্যি পাচ্ছেন স্থানীয়রাও। পদ্মা সেতুর মসৃণ এক্সপ্রেস হাইওয়ে
ধরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থেকে মাত্র ৩০ মিনিটে পৌঁছানো যায়
স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে। আর এটি খুলে দিলে আরও কম সময়েই বাড়ি
পৌঁছতে পারবেন দক্ষিনাঞ্চলের লোকজন। এতোদিন ফেরি-লঞ্চের জন্য
অপেক্ষায় থাকতে হলেও এখন আর তা হবে না। এমনকি বৈরী
আবহাওয়াতেও গাড়ি ছুটবে প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে। এভাবেই দেশের
এই দীর্ঘ সেতুটি বাস্তবায়নের সঙ্গে স্বপ্নের জাল বুনছেন
দক্ষিণাঞ্চলবাসী।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মাপাড়ের মানুষের স্বপ্নটা আরও
বড়। কেননা এক্সপ্রেস হাইওয়ে সংলগ্ন শিবচরের প্রত্যন্ত এলাকায় গড়ে
উঠেছে অত্যাধুনিক শপিংমল। বসেছে নতুন নতুন হাটবাজার। এ
জনপদে ইতোমধ্যে জমির দাম বেড়েছে ১০-১৫ গুণ। পদ্মা সেতুকে ঘিরে
সরকার হাতে নিয়েছে বৃহৎ আবাসন প্রকল্প, বিসিক শিল্পনগরীসহ
নানান পদক্ষেপ। এদিকে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং
উপজেলায় অবতারণা হবে এক নৈসর্গিক দৃশ্যের। পাল্টে যাবে
রাজধানীর কাছের এ অঞ্চলের অর্থনীতির চিত্রও। ফলে নতুন নতুন
কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে পদ্মা সেতুকে ঘিরে।
সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে শুরু হওয়া পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে
শিবচর হয়ে পৌঁছেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। এ পথেই রেললাইন বিস্তৃত
হচ্ছে যশোর পর্যন্ত। শিবচরে দুটি স্টেশন, জাজিরায় একটি স্টেশনসহ
জংশন রয়েছে ভাঙ্গায়। এক্সপ্রেস হাইওয়ের শিবচরের পাচ্চর মোড় নামক
স্থানে গড়ে উঠেছে অন্তত পাঁচটি শপিংমল। যেখানে রয়েছে ক্যাপসুল
লিফটসহ আধুনিক সুবিধাদী। আরও কয়েকটি মার্কেট নির্মাণও
প্রক্রিয়াধীন। শিবচর অংশের এক্সপ্রেস হাইওয়ের পাশে গড়ে উঠেছে নতুন
অন্তত ৮-১০টি হাট-বাজার। নতুন রেলস্টেশন ঘিরেও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে
অর্থনীতি।
এছাড়াও পদ্মা সেতুসংলগ্ন শিবচরে ১০৮ একর জায়গায় ১ হাজার ৯০০
কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী, ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন
প্রধানমন্ত্রী। শিবচর ইউনিয়নে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের জন্য ৪০০
একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণেও
জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে এক্সপ্রেস হাইওয়ে সংলগ্ন শিবচর, ভাঙ্গা
ও সদরপুরে আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী এলাকায়। এ ছাড়া শিক্ষা, সংস্কৃতি,
অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, বিনোদন, খেলাধুলা, আবাসনসহ বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এই জনপদে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি
সংরক্ষণের উদ্যোগও চোখে পড়ার মতো।
স্থানীয় বাসিন্দা শুভ ঘোষ বলেন, পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের
সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থার আমূল উন্নয়ন ঘটতে যাচ্ছে।
এতে করে মুন্সীগঞ্জের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার সহজ
যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠতে যাচ্ছে।
শিমুলিয়া ঘাট এলাকার স্পিডবোট মাঝি শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা
সেতু দেখতে অনেক মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে আহে। আমরা তাদের
নিয়ে ঘুরি। দিন যাওয়ার সাথে সাথে পর্যটক সংখ্যা আরও বাড়তাছে।
আমাগো ইনকামও বাড়তাছে।’ তাই এ সেতু আমাদের আর্শ্বিবাদ।
সখের হাড়ি নামীয় রেস্টুরেন্ট ব্যবসীয় আব্দুল খালেক মজুমদার বলেন,
দেশের সর্ববৃহৎ সেতুটিকে ঘিরে পদ্মাপাড়ের এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক
সমৃদ্ধি বেড়েছে কয়েকগুণ। পর্যটক ছাড়াও এ পথের যাত্রীরা এ সেতুর
পাশে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসছেন। তাতে আমাদের বাণিজ্যিক
প্রসার হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা মাহিরা তাসফি প্রভা বলেন,
বিশে^র সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে
মনোরম পরিবেশ যে কাউকে পদ্মাতীরে ছুটে আসতে আগ্রহ সৃষ্টি
করবে। স্পীডবোটে করে এ পদ্মার বুকে চড়ার মজাই আলাদা। তাছাড়া এ
সেতুর আশপাশে পর্যাপ্ত থাকার হোটেল গড়ে ওঠলে আরো সুবিধা
ভোগ করবে দর্শনার্থীরা।
স্থানীয় সূত্র আরো জানায়, পদ্মার বুকে জেগে ওঠা নতুন চরের মধ্যে
হোটেল-মোটেল গড়ে ওঠারও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য উপভোগ ছাড়াও পদ্মাপাড়ে ভোরের ইলিশের হাটে অন্যরকম। পদ্মার
তাজা ইলিশ কেনাও আরেক ভালো লাগা। তাই ইলিশের রেস্টুরেন্টে ভরে
গেছে এলাকা। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দাবী, পদ্মা সেতু ঘিরে নিরাপদ
মানসম্মত ‘রিভার টুরিজম’ আরও আকর্ষণ বাড়াতে পারে। এদিকে
বাণিজ্যিক যাত্রায় আরো যোগ হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের
পাশেই ব্যতিক্রমী প্রাণী জাদুঘর। পদ্মা সেতুর কাজের পাশাপাশি জেলার
শ্রীনগরের দোগাছি পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়া-১ এ রয়েছে প্রাণী ও
প্রাকৃতিক সম্পদ।
তারিখঃ ০৫.০৬.২০২২ইং
মাহবুব আলম প্রিয়
রূপগঞ্জ(নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
মুঠোফোন-০১৯১৬-৯৫৭৪৯৪