বাস্তবায়নই নবী প্রেমের প্রকৃত আলামত

reporter / ১২৮ ভিউ
আপডেট : রবিবার, ১২ জুন, ২০২২

মু. মাহবুব আলম

আমি মুসলিম। আল্লাহর কাছে তাঁর বান্দা হিসেবে
আতœসমর্পনকারী। তাই আমরা ইসলামের খাদেম। আর এ মুসলিম
হতে পারার উসিলা আমার রাসুল(স.)। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহী ওয়া সাল্লাম। শতভাগ মুসলিম হতে হলে আমাকে মানতেই
হবে আমার ¯্রষ্টা আল্লাহকে এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল হজরত
মুহাম্মদ (সা.)কে। আর বাকি দুনিয়ার যতো প্রেমময় মানুষ আছে,
যতরকমের ভালোলাগার জিনিস আছে সবকিছুর অবস্থান দ্বিতীয়তে।
অতএব, আল্লাহর রাসুলকে ভালোবাসা আমাদের প্রত্যেকের জন্য
ওয়াজিব। প্রশ্ন হলো এই ভালোবাসা কেমন হওয়া চাই? কেমন
ভালোবাসি আমরা ? মুখে মুখে লোক দেখানো ?
না! অন্তরের বিশুদ্ধ বিশ্বাসে পরিপূর্ণ ধর্ম কর্ম মানার নামই
ইসলাম। যা ভালো লাগলো গ্রহণ করলাম্ধসঢ়; যা নিজ কর্মের বিপক্ষে
যাবে তা বর্জন করলাম। এর নাম ইসলাম নয়। দিনভর নানা পাপকর্ম
করে , পরের অধিকার বা হক নষ্ট করে , জোর জুলুম, জবর দখল করে কেউ
মুসলিম হতে পারেন না। তাই মুসলিম হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো নবী

প্রেমি হওয়া। আর কেউ নবী প্রেমি হলে কোন অপরাধে জড়িত হতে
পারে না। কারন, নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহী
ওয়া সাল্লামের দেখানো পথ, তাঁর উপর নাজিল হওয়া পবিত্র
কুরআন,তাঁর জবানের,আচরনের, সম্মতিদানের পবিত্র হাদীসগুলো
মানতে পারলেই মুসলিম হওয়া যায়। যা ইহকালের শান্তি ও পরকালের
মুক্তির একমাত্র পথ।
মুখে মুখে আশেকে রাসুল। বাস্তবে শিরক বিদআত, অপকর্ম ও
পাপকর্মে লিপ্ত থাকা মোটেই রাসূলের আদর্শ নয়। তাই প্রকৃত
রাসূল প্রেমী হতে হলে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন জরূরী। এর রয়েছে
গুরুত্বও।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন: (হে নবী) আমি
তোমাকে সারা জগতের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি। (সুরা
আম্বিয়া, আয়াত ১০৭) এই রহমতের নবীর প্রতি উম্মতের সবচেয়ে
বড় অধিকার হলো তাকে মন ও মনন দিয়ে ভালোবাসা। তার প্রতি
ভালোবাসা যেন আর সব ভালোবাসার ঊর্ধ্বে হয়। এমনকি জান ও
প্রাণের চেয়ে যেন তিনি প্রিয় হন। এই ভালোবাসা ঈমানের
আলামত। এ বিষয়ে সহীহ হাদীস গ্রন্থ বুখারীর ১৫নং হাদিসে
আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত
ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তার কাছে আমি তার পিতামাতার
চেয়ে,সন্তানাদির চেয়ে এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে প্রিয় না হবো।
শুধু কী তাই? নিজের জীবনের চেয়েও বেশি প্রাধান্যের অধিকার
রয়েছে নবী হযরত মুহাম্মদ (স.)। পবিত্র কুরআনে তাই আল্লাাহ
এরশাদ করেন, নবীর ওপর মুমিনদের জানের চেয়ে বেশি হক আছে।
(সুরা আহজাব, আয়াত: ৬) অর্থাৎ যেই ব্যক্তি নিজের জান-মাল ও
প্রবৃত্তির ওপর তার প্রতি ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিতে না পারবে,
বোঝা যাবে তার ঈমানে ঘাটতি আছে।
এছাড়াও আরো হাদীস পাঠে জানা যায়, একবার হজরত ওমর ফারুক
(রা.) রাসুলকে (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমার

কাছে সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়, কেবল আমার জান ছাড়া।’
রাসুল (সা.) বলেন, ‘না (একথা সত্য নয়), আল্লাহর কসম যার হাতে
আমার প্রাণ, ওইসময় পর্যন্ত (সত্য) নয়, যতক্ষণ না কারও কাছে আমি
তার জানের চেয়ে বেশি প্রিয় হবো।’
রাসুল (সা.)-এর মুখ থেকে এই কথা ওমর (রা.)-এর মনে বিদ্যুতের মতো
স্পর্শ করল, এবং তার মন ওই সময়ই বদলে গেল। তিনি বললেন, ‘খোদার
কসম, আপনি আপনি আমার জানের চেয়ে বেশি প্রিয়।’ রাসুল
(সা.) বললেন, ওমর, এক্ষণে তোমার ঈমান পরিপূর্ণ হলো। (সহিহ
বুখারি, হাদিস ৬৬৩২)
নবী প্রেমী হওয়ার গুরুত্ব বিষয়ে আরো এমন হাদীস পাঠে জানা
যায়, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক সাহাবি রাসুলের
দরবারে এসে জিজ্ঞেস করেন— ‘কিয়ামত কবে?’ রাসুল (সা.)
জানতে চাইলেন ‘তুমি এর জন্য কী কী প্রস্তুতি নিয়েছো?
সাহাবি বললেন, ‘আমি অধিক পরিমাণে নামাজ রোজা জাকাত
সদকা আদায় করে কোনো প্রস্তুতি তো নিতে পারিনি, কিন্তু
আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি আমার ভালোবাসা আছে।’ রাসুল
(সা.) তখন বললেন, ‘তুমি তার সাথেই থাকবে যাকে তুমি
ভালোবাসো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৬১৭১) তারপর সাহাবি
বলেন, এই সুসংবাদের পর আমি এত খুশি হয়েছি, ইসলাম গ্রহণের
পর অন্যকিছুতে এত খুশি হইনি।
সুতরাং নবী প্রেমি না হলে মুসলাম হওয়া যায় না। এমন কঠোর
নির্দেশনা পবিত্র কুরআনে বিদ্যমান। সুরা নিসা, আয়াত ৬৯ তে
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য
করবে, তারা তাদের সাথে থাকবে নবী সিদ্দিক শহীদ ও নেককারদের মধ্যে
আল্লাহ যাদেরকে পুরস্কৃত করেছেন, আর সাথী হিসাবে তারা
কতই-না সুন্দর।্#৩৯;
প্রকৃত ভালোবাসার বা আশেকে রাসূল হওয়ার জন্য শর্ত হলো
প্রেমিক আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাজকে নিজের সবকাজের ওপর

প্রাধান্য দিবে। তার পূর্ণ আনুগত্য করবে। সুন্নতের গুরুত্ব দিবে।
নিজের কুপ্রবৃত্তি রসুলের বিধানের আলোকে দমন করবে।
এটাও ভালোবাসার লক্ষণ যে রাসুল (সা.)-এর জীবন ও আদর্শ নিয়ে
বেশি বেশি আলোচনা করা, তার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখা, এবং
উঠতে-বসতে দরুদ পাঠ করা। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সাথে সম্পর্ক
রাখেন এমন মানুষদের ভালোবাসাও তাকে ভালোবাসার আলামত।
সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, বিশেষ করে চার খলিফা, হজরত
হাসান ও হুসাইন, মুমিনদের মা (রাসুলের স্ত্রীগণ), ও রাসুল (সা.)-
এর মেয়েদের প্রতি অন্তর থেকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রাখাও ঈমানি
দায়িত্ব।
আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজেই সাহাবিদের প্রতি ভালোবাসা রাখা
ঈমানের আলামত ও শত্রুতা বা ঘৃণা রাখাকে মোনাফেকি বলেছেন।
হজরত হাসান ও হুসাইন (রা.) সম্পর্কে তিনি বলেন, ইয়া আল্লাহ,
আমার এই দুইজনের প্রতি ভালোবাসা আছে, আপনিও তাদেরকে
ভালোবাসুন।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সা.) দেখেছি
লাউ পছন্দ করতে, তারপর থেকে আমারও লাউ ভালো লাগতে শুরু করে। এটাও
ভালোবাসার আলামত যে, রসুলের সাথে সম্পর্কযুক্ত সবকিছুর
প্রতি ভালোবাসা থাকা। তিনি যেই শহর ভালোবাসতেন, তার জন্যে
জান উৎসর্গ করার মন থাকা, তার প্রতিটি বালুকণার প্রতি
ভালোবাসা রাখা— এই সবই পারতপক্ষে রাসুলকে ভালোবাসারই
নিশানা।
মোদ্দাকথা, রাসুলকে (সা.) ভালোবাসা ঈমানের অংশ ও ঈমানদারের
আলামত। এই ভালোবাসা হৃদয়ের গহীন থেকে উৎসারিত, কেবল
লোকদেখানো ভালোবাসা নয়। যারা আল্লাহর রাসুলকে (সা.)
ভালোবাসে, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে কোরআনে ঘোষণা দেন ‘তারা
আল্লাহর দল, মনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহর দলের লোকেরাই সফল।’ (সুরা
মুজাদালাহ, আয়াত ২২) । গোটা বিশ্বজগতে আল্লাহ তায়ালা যাকে

সবচেয়ে উন্নত ও মহান গুণাবলী ও অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি
করেছেন তিনি হলেন শ্রেষ্ঠনবী ও বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা
(সা.)। যার প্রশংসায় স্বয়ং আল­াহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়
তোমাদেরই মাঝ থেকে এক রাসুল তোমাদের কাছে এসেছে।
তোমাদের কষ্ট ভোগ করা তার কাছে অসহনীয় এবং তিনি তোমাদের
কল্যাণের পরম আকাঙ্ধসঢ়;ক্ষী। তিনি মুমিনদের প্রতি অতি মমতাশীল ও
বার বার কৃপাকারী’ (সুরা আত তাওবা, আয়াত: ১২৭)।
মহানবী (সা.) শান্তির ধর্ম ইসলামকে বিশ্ববাসীর মাঝে শান-শওকত,
ঐশ্বর্য ও প্রতাপের সাথে তুলে ধরেছেন তা একান্ত বিনয় এবং
নম্রতার বৈশিষ্ট্য নিজের মাঝে ধারণ করে, কোনোক্রমেই জোর-
জবরদস্তি, উগ্রতা, অবজ্ঞা, ঘৃণা-বিদ্বেষের মাধ্যমে নয়। আমরা যদি
মহানবীর (সা.) জীবনাদর্শ অনুসরণ করে চলি তাহলে প্রতিটি
পরিবার, প্রতিটি শহর এবং প্রতিটি দেশ হতে পারে শান্তিময়। তাই
বিশ্বময় শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত করার জন্য চাই বিশ্বনবী
(সা.)-এর আদর্শমতে জীবন পরিচালনা করা। উগ্রতা, ধর্ম নিয়ে
বারাবারি করা, কঠোরতা প্রকাশ করে অন্যকে তুচ্ছ করার মতো জঘন্য
আচরন পরিহার করা অতীব জরুরী। সমাজে ইসলামী আদর্শ
বাস্তবায়নের বিস্তর সংকট দেখা যায়। ফলে অশান্তি , হানাহানি, সুদ
ভিত্তিক অর্থনীতির বিচরন ক্রমেই বেড়ে চলছে। আলেমগণ, নবীর
আদর্শ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় পিছিয়ে আছেন। তাদের বেশিরভাগ
আলেম নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন। কেউ কেউ নিজের
দরবারের উন্নয়নে , পূর্ব পুরুষদের মাজার উন্নয়নে কাজ করছেন।
কেউ রাজনীতির নামে নিজেদের মতবাদ প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন।
প্রকৃত আলেম যারা ইসলামের সুন্নাহ ভিত্তিক দলিলাদি নিয়ে কথা
বলার চেষ্টা করেন । তাদেরকে নানাভাবে হয়রানী করছেন কতিপয় দরবারি
আলেম নামধারীসহ একটি তাগুত গোষ্ঠী। এভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠায়
অন্তরায় পরিবেশ বিরাজে একশ্রেনির আলেমগং দায় এড়াতে পারেন
কী ?
লেখক- সাংবাদিক

এম এ (কামিল), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, (কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ)
ইমেইলঃnewspriyorupganj@gmail.com


এই বিভাগের আরও খবর