নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিভিন্ন প্রজাতির কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন, চাঁদপুর আর.এস ডেইরি ফার্ম প্রতিষ্ঠানটিতে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের গরু মহিষ ছাগল খাসি ও ভেড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
১৪ বছর আগে নিজ বাড়িতে একটি শেড বানিয়ে ৮টি গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করেন আনোয়ার হোসেন আনু পাটোয়ারী। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। এখন প্রতি বছর ৮০০ গরু মত ক্রয় বিক্রয় করেন তিনি। সেই খামার থেকে এবার কোরবানির ঈদে ২০০ গরু বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন তিনি । যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা।
চাঁদপুর পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ড দক্ষিণ গুনরাজদী কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) কোল্ড স্টোর এর সামনে খামারটি দৃষ্টি কাড়ছে সবার। পুরো খামারটিতে রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। শেডের ভেতরে প্রতিটি গরুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে আলাদা আলাদা চৌবাচ্চা। রয়েছে গরুর গোসল, চিকিৎসা ও প্রজননের জন্য আলাদা ব্যবস্থা।
জানা যায়, গরু মোটাতাজা ও দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের গরু দিয়ে যাত্রা শুরু হয় আর. এস ডেইরি ফার্মের। এখানে বড় গরু থেকে শুরু করে ছোট ছোট গরুও রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন গমের ভুসি, মুগডাল ভুসি, মসুর ভুসি, সয়াবিন খৈল, কাঁচা ঘাস, খড় ও লবণ ছাড়াও দেশীয় বিভিন্ন দানাদার খাবার দেওয়া হয় গরুকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই গরুর খামার এটি। ভেতরে সাজানো গোছানো। সারিবদ্ধ গাভি ও ষাঁড় খাবার খাচ্ছে। তিনটি শেডে এ বছর গরু রয়েছে শতাধিক। এসব গরু লালন-পালনে কাজ করছেন পাঁচ জন শ্রমিক।
কর্মরত শ্রমিক শহিদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পাঁচজন কর্মচারী গরুগুলোর যত্ন নেই। সপ্তাহে দুই দিন ব্লিসিং পাউডার ও চুন দিয়ে খামার পরিষ্কার করে রাখি। শুধু গরু কেনার জন্য নয়, অনেকেই শখ করে খামার দেখতে আসেন। মশা-মাছি বা কোনো রকমের দুর্গন্ধ নেই খামারে। সুন্দর পরিবেশ আর আধুনিক উপায়ে গরু পালন করি আমরা।
খামারের মালিক আনোয়ার হোসেন আনু পাটওয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, আমি শখ করে গরু পালতে গিয়ে এখন এগুলোর নেশায় পড়ে গেছি। বর্তমানে আমার ফার্ম দেশীয় গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। আমি পার্টনারের ব্যবসার করতে গিয়ে সেখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
ঈদুল আজহাসহ সারা বছরে এ অঞ্চলের মানুষকে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত গরুর মাংস দিতে খামারটি সেভাবে প্রস্তুত করেছি।
তিনি আরও বলেন, খামারের বয়স ১৪ বছর চলছে। যদি ঈদুল আজহা উপলক্ষে মানুষকে সুস্থ, সবল ও সুঠাম দেহের গরু দিতে পারি, তাহলে তাদের মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি আমিও সওয়াবের অধিকারী হবো। আমি খুব লাভের চিন্তা করি না। কেননা আমিও এই সমাজের একজন। মানুষ যদি কোরবানির সময় প্রতারিত না হয়ে ভালো গরু পায়, তাহলে সবাই কমবেশি উপকৃত হবে। আমার দেখাদেখি জেলায় অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন আনু পাটওয়ারী আরো বলেন, চাঁদপুরে আমি প্রথম শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের গরু বিক্রি শুরু করি, পরে আমার দেখাদেখি অন্যরাও শুরু করেছে। আমি মনে করি বাজারে গেলে মানুষ বিভিন্নভাবে প্রতারিত হওয়ার শঙ্কা থাকে। কোরবানির হাটে দালাল থাকে, তারা মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে। খামারে এলে পছন্দের গরু কিনতে পারে। আমরা শতভাগ সুষ্ঠু ও সুঠাম দেহের গরু দিয়ে থাকি।
আর এস খামারের গরুগুলোকে প্রতিদিন একবার বা দুবার গোসল করানো হয়। দুর্গন্ধমুক্ত রাখা হয়। এখানে ঘাস চাষ করেছেন তিনি। যা দিয়ে গরুগুলোর ঘাসের চাহিদা পূরণ হয়। পাশাপাশি খড়, ভুসি, পোলট্রি ফিড ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, আমি ৮ টি গরু দিয়ে শুরু করেছিলাম। বর্তমানে ১০০টি গরু রয়েছে। আমার বাবার জমি হওয়ায় কোনো ভাড়া দিতে হয় না। বড় গরু থেকে শুরু করে ছোট ছোট গরুও রয়েছে। সব গরুকে দেশিও খাবারের মাধ্যমে লালন-পালন করা হয়েছে। বর্তমানে গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের সামগ্রিক খরচ বেড়ে গেছে।
চাঁদপুর জেলার পানি সম্পদ অধিদপ্তরের আয়োজনে মেলায় আমার আর.এস ডেইরি ফার্ম ২০২১ সালে ছাগল পালনে দ্বিতীয় স্থান লাভ করি। ২০২২ সালে ছাগল পালনকারী প্রথম স্থান লাভ করি। এবং ২০২৩ সালে মেলায় গরু পালনকারী হিসাবে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছি। আপনাদের দোয়ায় আগামী দিনগুলোতে প্রথম স্থান ধরে রাখব বলে আশা করছি।
কোরবানির গরু দেখতে আসা আবুল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, এই খামারটি চাঁদপুরে অন্যতম খামার। এটার সুনাম রয়েছে। আমরা প্রতি বছর এখান থেকে গরু নিয়ে থাকি। পছন্দের গরু বুকিং দিয়ে গেলে ঈদের দিন সকালে তারা পৌঁছে দেয়। এতে করে গরু দেখভাল ও রাখার জায়গা নিয়ে আলাদা চিন্তা করতে হয় না।
খামারে গরু দেখতে আসা সবুজ পাটোয়ারী আরেক ক্রেতা বলেন, আসলাম এবং খামারের পরিবেশ দেখলাম। অনেক খামার দেখেছি কিন্তু এই খামারের মতো না। কোরবানির গরু কিনলে এখানে নিরাপদে থাকে। বাহির থেকে নিলে গরু রাখা নিয়ে অসুবিধায় পড়তে হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, আনোয়ার হোসেন আনু পাটওয়ারী খামারটি অনেক সুন্দর সবচেয়ে বড় খামারের বিষয়টি আপেক্ষিক। তবে গরু মোটাতাজাকরণে এত সুন্দর খামার চাঁদপুরে খুবই কম। গরুর খাদ্য, চিকিৎসা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হয়।
আমি চাঁদপুরে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই খামারের নানা দিক নিয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছি। আমার বিশ্বাস চাঁদপুরের যত খামার রয়েছে সেগুলোতে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু লালন-পালন করা হয়। কোনো ধরনের হরমোন এবং অখাদ্য কুখাদ্য ব্যবহার করা হয় না।