নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পায়ে বটি রেখে কাঠের ওপর মাছ কেটে জীবনযুদ্ধ শুরু আবার মাছ কাটতে কাটতেই ঘাম ঝড়াতে শুকাতেই দিন শেষ। এ পেশায় জড়াতে পুঁজি বলতে লাগছে শুধু ১টি ধারালো দা এবং এক টুকরো কাঠ। এরপর ধৈর্য নিয়ে গ্রাহকের অপেক্ষায় বসে থাকা। যখন লোকজন বাজারে মাছ, মুরগী ও হাঁস কেনা শুরু করে তার পর পরই শুরু হয় মাছ কেটে জীবিকার্জনকারীদের পেশাদারিত্ব। বিষয়টি এক ধরনের সহযোগীতা বা সেবার বিনিময়ে পারিশ্রমিক অর্জনও বলা যেতে পারে। তবে অবাক হলেও সত্যি, এই মাছ কাটা ও এরপর মাছের উচ্ছিষ্ট আঁশ এবং পটকা বিক্রি করে চাঁদপুরের বেশ কয়েকজন যুবক প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা কামিয়ে সাবলম্বী হচ্ছেন।
১৯ মে বৃহস্পতিবার চাঁদপুর শহরের বিপুনীবাগ বাজারে গেলে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে যুবকদের এমন মাছ কাটার দৃশ্য দেখা যায়।
মাছ কাটায় জড়িত বিপুনীবাগ বাজারের পেশাদার জাকির, আল-আমিন, শরিফসহ অন্যান্যরা বলছেন, বাপ দাদার দেখাদেখি এ কাজে জড়িত হয়ে আয় ভালো হওয়ায় এখন এটিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। প্রতিদিন বিকাল ৩ টা হতে রাত ১০ টা পর্যন্ত মাছ কাটা ও এর আঁশ ও পটকা সংগ্রহের কাজ করছি। সাইজ অনুযায়ী মাছ কাটতে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক নেই। তবে এ কাজ করলেও বাজারে প্রতিদিনই ইজারাদারকে টাকা দিতে হচ্ছে।
তবে মাছের আঁশ যখন কয়েক মণ হয় এবং পটকা যখন হয় কয়েক কেজি তখন চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে পাইকাররা এসে এগুলো কিনে নিয়ে যায়। এতে ভালো আয় হওয়ায় বেশি লাভের আশায় মাছ কেটে ফেলার পর তার আঁশ এবং পটকা জমিয়ে গুছিয়ে রাখেন মাছ কাটার পেশায় নিয়োজিতরা। এমনটি জানিয়ে বিপুনীবাগ বাজারের মাছ কাটায় নিয়েজিত মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, পটকা শুধু মাত্র বোয়াল মাছেরটা বিক্রি করা যায়। যা মাসে ৪/৫ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়। মাছের আঁশ পানিতে ভিজিয়ে শুকিয়ে এরপর বস্তাবন্দী করে বিক্রি করতে হয়।এক্ষেত্রে মাছের আঁশ মণ প্রতি ৫/৬ হাজার টাকা এবং বোয়াল মাছের পটকা ৪/৫ হাজার টাকায় কেজি প্রতি বিক্রি করা সম্ভব হয়।
এদিকে মাছ কাটায় জড়িতদের থেকে টাকা নিচ্ছেন বলে তাদের মজুরী নিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকিতে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিপুনীবাগ বাজার ইজারাদার পরিচালনাকারী মোঃ মোক্তার হোসেন।তিনি বলেন, সময় পরিবর্তন হওয়ায় আগে মানুষ মাছ কিনে নিলে বাসায় সেটা মা বোন বা স্ত্রীরা কাটাকুটি করতো। কিন্তু এতে সময় বেশি লাগায় এখন সামান্য কিছু টাকা দিলেই মাত্র কয়েক মিনিটে বাজারেই সেটা কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রাহকরা মাছ কাটার পর ওদেরকে যাতে টাকা দিতে টালবাহানা না করে আমরা সে বিষয়টি নজরদারিতে সব সময় রাখি।
বেকার না ঘুরে ইচ্ছে থাকলে সৎভাবে আয় রোজগারের অনেক পথ খোলা রয়েছে বলে মনে করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশ। তিনি মাছকাটায় জড়িত চাঁদপুরের পেশাদার যুবকদের সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, মাছ কেটে ও মাছের উচ্ছিষ্ট আঁশ ও পটকা বিক্রির বিষয়টি আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। তাদের যদি এ কাজের প্রসারে সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা লাগে অবশ্যই জেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে।