অবশেষে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় নারায়ণপুর পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিব মোঃ মাহবুবুর রহমান ভূইয়া স্বাক্ষরিত গত ১৬ নভেম্বর তারিখের ১২৪৭/১(৮) নং স্মারকে এ আদেশ জারি করা হয়েছে। মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেনু দাস নারায়ণপুর পৌরসভার প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। আর কোনো বাধা রইল না নারায়ণপুর পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনায়। প্রশাসক তার মেয়াদে পৌরসভার হাল নাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচনের আয়োজন করবেন। নির্বাচিত পরিষদের কাছে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেওয়ার আগ পযন্ত তিনি পৌর প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন -২০০৯ এর ধারা ১২৯ অনুযায়ী মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ হতে নতুন প্রশাসক নিয়োগের পূর্ব পর্যন্ত পূর্ববর্তী প্রশাসকের সম্পাদিত কার্যক্রম ভূতাপেক্ষভাবে অনুমোদন করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগ।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের সময় চাঁদপুর-১ ( কচুয়া) আসনের আওতাধীন থাকাবস্থায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর নারায়ণপুর কে পৌরসভা ঘোষণা করার কাজ করেন। সরকার পৌরসভা ঘোষণা করলে তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল মোস্তফা তালুকদার হাইকোর্টে রিট দায়ের পৌরসভা বাতিলের আবেদন করে। যার কারনেই নারায়ণপুরে ২০০৩ সালের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হওয়ার পরে আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। নারায়ণপুর পৌরসভায় ২৪ টি গ্রাম ও ২৪টি মৌজা রয়েছে।
এ বিষয়ে নবাগত পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেনু দাস বলেন, মন্ত্রনালয় থেকে আজ এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে আমাকে পৌর প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ১০ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও রাজিক আল জলিলের বেঞ্চে নারায়ণপুর পৌরসভা বহাল রাখার ব্যাপারে রায় দেয়া হয়। মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদকে ২০১০ সালে পৌরসভা ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইউপি চেয়ারম্যান উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। গত ২ মে পৌরসভার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। বন্ধ হয়ে যায় পৌরসভার কার্যক্রম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদকে পৌরসভা করার জন্য ২০১০ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন এলাকাবাসী। ওই বছরের ১৫ জুলাই মন্ত্রণালয় এটিকে পৌরসভায় উন্নীত করে। গত ৩০ এপ্রিল মন্ত্রণালয় এ পৌরসভার গেজেট প্রকাশ করে এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
পৌরসভা সৃষ্টি বা মেয়াদ শেষ হলে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় সরকারের প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) বিল-২০২২ উত্থাপন করা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনে বলা আছে, পৌরসভা ঘোষণা করতে হলে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে দেড় হাজার হতে হবে। এর কম হলে হবে না।
প্রস্তাবিত আইনে, এই সংখ্যা বাড়িয়ে দুই হাজার করা হয়েছে। তাছাড়া এ বিল পৌরসভার সচিবের পদের নাম বদলে ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনের ৪২(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো শহর এলাকাকে পৌর এলাকা ঘোষণার পর পৌরসভার কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করিবে এবং পৌরসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত উক্ত প্রশাসক প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করিবেন। তবে প্রস্তাবিত আইনে এই ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বলা হয়েছে, পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন পরিষদ গঠনের আগ পর্যন্ত কাজ চালানোর জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেবে সরকার।
সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা সরকার উপযুক্ত মনে করে এমন কোনো ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগ দেবে।
বিলে পৌরসভার পরিষদের বাতিল সংক্রান্ত ধারায় নতুন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাধিক্রমে ১২ মাস বেতন বকেয়া থাকলে পরিষদ বাতিল হবে। নতুন পৌরসভা গঠন হলে বা কোনো ইউনিয়নের অংশবিশেষ পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হলে বিলুপ্ত ইউনিয়ন বা বিলুপ্ত অংশে কর্মরতদের পৌরসভায় অন্তর্ভুক্তির বিধান বিলে রাখা হয়েছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি উন্নত জীবন ও পর্যাপ্ত নাগরিক সেবার প্রত্যাশায় অধিক সংখ্যাক মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। একইসঙ্গে শহর এলাকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। নতুন নতুন অনেক পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর দেখা যায়, পৌরসভার নাগরিক সেবা দেওয়া এবং নিজস্ব প্রশাসন পরিচালনার সক্ষমতা থাকে না। সুশাসন নিশ্চিত ও পর্যাপ্ত সেবা দেওয়ার শহরগুলোকে বাসযোগ্য করতে শহর গঠনে জনসংখ্যার ঘনত্বের মান পরিবর্তন প্রয়োজন। বিদ্যমান আইনে পৌরসভাগুলোর মেয়াদ পাঁচ বছর শেষ হওয়া সত্ত্বেও নতুন পরিষদ প্রথম সভায় মিলিত না হওয়া পর্যন্ত, পূর্বের পরিষদ দায়িত্ব পালন করতে পারে। অনেক সময় পৌরসভার মেয়াদ শেষ হলেও বিভিন্ন কারণে রিট মামলা বা অন্য কোনো মামলা করে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিষদ অনির্ধারিত সময়ের জন্য পৌর প্রশাসন পরিচালনা করে। ফলে আইনের এ শর্তটি সংশোধনক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভার ক্ষেত্রে নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগ করা প্রয়োজন।