শিরোনাম:
মতলবে পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম, মালামাল লুট মতলব দক্ষিণে পরিত্যক্ত রান্নাঘর থেকে মরদেহ উদ্ধার মতলব উত্তরে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ মিছিল মতলব দক্ষিণে ভেটেরিনারি ফার্মেসীগুলোতে অভিযান, চাঁদপুরে সম্পত্তিগত বিরোধ : হাতুড়ির আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু মতলবে সরকারি গাছ নিধন: বনবিভাগ-এলজিইডির দোষারোপে জনরোষ মতলব উত্তরে নিশ্চিন্তপুর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত মতলব সরকারি কলেজে নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত আমিরা বাজার থেকে লতিফগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা চাঁদপুর ২ আসনের বিএনপি নেতা তানভীর হুদার রাজনৈতিক প্রচারণায় ডিজিটাল যাত্রা, চালু করলেন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

কমছে কৃষি জমি, খাদ্য সংকট মোকাবেলার প্রস্তুতি কতটুকু?

reporter / ৩১৩ ভিউ
আপডেট : রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২

মাহবুব আলম প্রিয়ঃ
 দেশের নিন্ম আয়ের লোকজন অনেকটাই দিশেহারা বাজারের পন্যের বাজার মুল্যের কাছে। তাদের নাগালের বাইরে থাকে সব সময় প্রায় সব পন্য৷ কারন,  তাদের আয়ের সঙ্গে বাজারের বিক্রি করা পন্য মুল্যের মিল নেই। আবার  কৃষি প্রধান এ দেশের কৃষিজাত পন্যের ন্যায্যমুল্য না পাওয়ায় বিভিন্ন সময় কৃষকদের হয়ে আন্দোলনের খবর পাই আমরা৷ একদিকে কৃষিজ  পন্যের দাম না পেয়ে অন্যদিকে অব্যাহতভাবে আবাসন কোম্পানির পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় কমে যাচ্ছে কৃষক ও কৃষি জমির পরিমাণ। ফলে দেশে খাদ্য সংকটের ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিন্তিত জনসাধারণের।  শুধু তাই নয়,  দেশের  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দিয়েছেন। তবুও ভাবনার বিষয় হলো, খাদ্য সংকট মোকাবেলায় দেশের প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যার জন্য কী প্রস্তুতি নিলো সরকার বা দেশের কৃষি বিভাগ।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  এক অনুষ্ঠানে দেশবাসিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছিলেন ‘আমরা যদি সবার ঘরে খাবার নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে অন্যান্য সমস্যার সমাধানও করা যাবে। যেখানে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা চালু রাখাসহ সরবরাহ ব্যবস্থা বজায় রাখা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
প্রকৃতপক্ষে, জনবহুল কিন্তু অর্থনীতিতে পিছিয়ে থাকা প্রতিটি দেশেরই খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। আমাদের দেশও  এর ব্যতিক্রম নয়। এ দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে জমির পরিমাণ কম। এ অবস্থায় কৃষিজমির পরিমাণ কমতে থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ফলে ভয়ানক পরিস্থিতি ঘটতে পারে।
তবে আমরা বিশ্বাস করি,  শিল্প ও সেবা খাতের অব্যাহত উন্নতি ঘটলে এবং রফতানি বাণিজ্য চাঙ্গা থাকলে আমদানি করেও খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তবে জনবহুল ও স্বল্পোন্নত দেশে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে কিছুতেই পরনির্ভরশীল করে রাখা উচিত নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  কৃষি খাতের আরও আধুনিকায়ন দরকার। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কালের সঙ্গে খাঁপ খাইয়ে নিতে হবে।  এজন্য বিনিয়োগ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল কাজে লাগানোর ওপরও জোর দিতে হবে।
হতাশার বিষয় হলো, দেশের  কৃষকরা কৃষিজ ফসল ফলনে ও চাষাবাদে নানাভাবে অনুৎসাহিত হচ্ছে। তারা  কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করলেও দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে  বঞ্চিত ও প্রতারিত হচ্ছেন। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কৃষকের কাছ থেকে পণ্য সরাসরি বাজারে নেয়ার পরিবেশ না থাকায় তারা দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। ফলে তাদের ঘাম ঝড়ানো ফসলের দাম লুফে নিচ্ছে দালাল সিন্ডিকেট। তাই দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার বিষয়টিকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে।
সূত্রমতে, খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে,  অভ্যন্তরীণভাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো। অথচ অভ্যন্তরীণভাবে খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হলে ফসলি জমিকে বিকল্প ব্যবহারের হাত থেকে রক্ষার   ব্যবস্থা থাকা দরকার। যার বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে।
সূত্রমতে, দেশে  বছরে প্রায় ২ লাখ একর কৃষিজমি বিকল্প ব্যবহারে চলে যাচ্ছে। ভরাট হয়ে যাচ্ছে হাওর, বিলসহ অন্যান্য জলাভূমি।  অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলেও ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। জোর করে কৃষি জমি ভরাটের অভিযোগও কম নয়। দেশের বৃহত্তর শিল্প গোষ্ঠী ও প্রভাবশালীরা এমন কর্মে জড়িত থাকায় কৃষকরা বাধ্য হচ্ছে নিজের জমি ছেড়ে দিতে। এভাবে  কৃষি জমি বিলুপ্ত হচ্ছে।
বাস্তবে আমাদের বড় শক্তি কৃষিখাত।
সম্প্রতি কভিড ১৯ বা  করোনা পরিস্থিতি বিষয়ক এক জড়িপ সূত্রে জানা যায়,  বিশ্বজুড়ে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০ থেকে ৬০ কোটি বাড়তে পারে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ১৬ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার ৩ কোটি ৩০ লাখ দরিদ্র এবং এর ভিতরে ১ কোটি ৭০ লাখ অতিদরিদ্র। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে,  বিশ্বমন্দার ভয়াল থাবার পাশাপাশি হানা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূ‚র করার লক্ষ্য পূরণ করতে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এই যখন সার্বিক প্রেক্ষাপট তখন কৃষি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে কৃষিপ্রধান এদেশকে ।
দেশের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী মহল তাই জোর দিয়েছেন কৃষির উপর। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সকলকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন দেশের কৃষি বিভাগকে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে হাতে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা।
‘কৃষিই সমৃদ্ধি’ ¯স্লোগান মাধ্যমে  কৃষকদের মাঠে নামাতে কাজ করছেন কৃষি বিভাগ। বাস্তবতা হলো,  সাড়ে ১৬ কোটি বাঙ্গালীর অস্তিস্তের বিষয়ে খাবার মজুদ করে রাখা যেমন জরুরী৷ তেমনি খাদ্য উৎপাদন বিষয়ে জোড়দার করা জরুরী ৷ পদক্ষেপ নিতে হবে যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে।  প্রতিটি বাড়ির আনাচে-কানাচে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি চাষ করে সমৃদ্ধি আনয়ন করা।  অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ, মৎস্যসহ সামগ্রিক কৃষি খাত ঘিরে নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।
যদিও চলমান সংকটে  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বাগ্রে জোর দিয়েছেন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার।  উপর। আবার জেলা-উপজেলা কৃষি অফিসের কার্যক্রমের সাথে প্রকৃত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
  দেশের ফসল বোরো ধান, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, বিভিন্ন শাকসবজির উৎপাদন বাড়লে আমদানী বা  পরনির্ভরশীল হতে হবে না। এটা পরিকল্পনাবিদদের বুঝতে হবে।   এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের পরিবর্তিত আবহাওয়ায় ধান ফসলের জন্য হুমকি হয়ে রয়েছে আকস্মিক বন্যা, কালবৈশাখী ও বিভিন্ন রোগ-বালাই। ব্লাস্ট রোগের অনুকূলে পরিবেশ বিরাজ করছে মর্মে কৃষি বিজ্ঞানীরা কিছুদিন পূর্বে সতর্কতা জারি করেছেন।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রতি ইঞ্চি জমির ব্যবহারে কাজ করা, শ্রমিক সংকট কাটাতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বাস্তবায়নের সকল কার্যক্রম সম্পাদন, ভর্তুকি মূল্যে কৃষিযন্ত্র কেনার ব্যবস্থাকরণ, জেলা-উপজেলায় কৃষি শ্রমিকের তালিকা তৈরি করে অধিক ধান উৎপাদনশীল এলাকায় শ্রমিকদের গমনের ব্যবস্থাকরণ, সেচযন্ত্রসহ সকল কৃষিযন্ত্র, জ্বালানি এবং খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয় অব্যাহত রাখা, হাওর অঞ্চলে সম্ভাব্য দুর্যোগের পূর্বেই সমস্ত ধান কৃষকের ঘরে তোলার ব্যবস্থা, খাদ্য অধিদপ্তরের জন্য ধান ও গম ক্রয়ের তালিকা তৈরি, কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের বীজ সহজলভ্য করার জন্য বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী নিয়মিত পরিদর্শন ও পরামর্শ প্রদান, ক্ষুদ্র কৃষক-কৃষি ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে ভ্রাম্যমাণ সবজি বাজার চালুকরণ প্রভৃতি।
 কৃষি জমি কমে গেলে কমে যাবে কৃষি উৎপাদন। হুমকির মুখে পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা। কিন্তু সমন্বিত উদ্যোগে এ সমস্যাকেও সচেতনভাবে সমাধান করা সম্ভব।
ব্যাপারটি ভাবিয়ে তোলে কৃষি বিশেষজ্ঞদের। যে সব দেশ খাদ্যে সবসময় উদ্বৃত্ত থেকেছে সে সব দেশেও তখন দেখা দেয় খাদ্য সঙ্কট। আর এ কারণেই বেড়ে যায় খাদ্যশস্যের দাম। আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের উৎপাদন নিজেদেরই করতে হবে। এই বোধ এবং বর্তমান সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগ থেকেই আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি।
এখন আসা যাক, কী কী কারণে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে দিনে দিনে। বেশির ভাগই হলো মানুষের দ্বারা সৃষ্ট কারণ, তবে কিছু প্রাকৃতিক কারণও রয়েছে। মনুষ্য সৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে প্রধান প্রধান হলো শিল্প কল-কারখানা তৈরি, রাস্তা-ঘাট তৈরি, হাট-বাজার তৈরি, বাড়ি-ঘর নির্মাণ, ইটভাটা নির্মাণ, অপরিকল্পিত দ্রম্নত নগরায়ণ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি, মসজিদ, মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি, নতুন নতুন অবকাঠামো ও স্থাপনা তৈরি, অপরিকল্পিত বনায়ন ইত্যাদি। অন্যদিকে প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- নদী ভাঙন, সাগরে বিলীন হওয়া ইত্যাদি। তবে কিছু কিছু কারণে আবার অল্প পরিমাণে কৃষিজমি অবমুক্ত হয়ে যুক্তও হচ্ছে। খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-বাঁওড়, পুকুর-জলাশয় ইত্যাদি ভরাট হয়ে কিছু কৃষিজমি প্রকৃতিতে যোগ হয়।
সরকারের উচিত, আমদানি-নির্ভরতা কমানো এবং অভ্যন্তরীণ খাদ্যোৎপাদনের দিকে আরও মনোযোগ দেয়া। সে জন্য প্রয়োজন কৃষকস্বার্থ সংরক্ষণ। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- সুষ্ঠু নীতিমালা না থাকায় কৃষিজমি নষ্ট করে বানানো হচ্ছে শিল্পকারখানা, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ইটখোলা। সেই সঙ্গে রয়েছে বিশ্ব জলবায়ুর প্রভাব। ফলে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে কৃষিজমি। বছরে ৮০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৩০ হাজার হেক্টরই যাচ্ছে অনুৎপাদনশীল খাতে।
 মোদ্দাকথা হলো, কৃষিজমি যে হারে কমছে সেই হারেই ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে তা পূরণ করতে হবে। আমরা সবাই সহজ ও সরল হিসাবটি বুঝতে পারি। আর সেটি হলো কৃষিজমি কমে গেলে কৃষি ফসল উৎপাদনই সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। তাই কম খাদ্যে বেশি পরিমাণ পুষ্টি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, কৃষি বহুমুখীকরণ, ফসল ফলানোর মৌসুম বৃদ্ধি করা, কমদিনে ফলে এমন ফসলের বিভিন্ন জাত সৃষ্টি করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে ফসলহানি থেকে রক্ষা করা, কৃষিকে রক্ষা করা, পুষ্টিসম্মত খাবার গ্রহণের বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন করাসহ সরকারী- বেসরকারি ও সামাজিক আন্দোলন জরুরি হয়ে পড়েছে।
লেখক- সাংবাদিক


এই বিভাগের আরও খবর