শিরোনাম:
ফরিদগঞ্জে কুকুরের কামড়ে আহত ২০ কচুয়ায় মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেপ্তার মেঘনায় কার্গোর ধাক্কায় তলা ফেটেছে সুন্দরবন -১৬ লঞ্চের, নারী নিখোঁজ ষোলঘর আদর্শ উবি’র ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অ্যাডঃ হুমায়ূন কবির সুমন কচুয়ায় নবযোগদানকৃত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে শিক্ষক সমিতি শুভেচ্ছা মতলব উত্তরে লেপ-তোশক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা উপাদী উত্তর ইউনিয়নে দীপু চৌধুরীর স্মরণে মিলাদ ও দোয়া পশ্চিম সকদী ডিবি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবগঠিত কমিটির দায়িত্ব গ্রহন মেঘনা নদীতে গোসল করতে গিয়ে তলিয়ে গেছে এক যুবক ফরিদগঞ্জের ঘনিয়া দরবার শরীফের পীরের সঙ্গে ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভুঁইয়ার সাক্ষাৎ

চেয়ারম্যান সেলিম খানের সম্পদ অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক

reporter / ১৪৮ ভিউ
আপডেট : সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২

চাঁদপুর প্রতিনিধি: চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় নির্বিচারে বালু উত্তোলনে করে সরকারি অনুমতি ছাড়াই বিক্রি এবং কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিত্তের মালিক বনে যাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের সাথে অঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এছাড়া তার দাখিলকৃত সম্পদের হিসাবও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য ও রেকর্ডপত্র তলব করেছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। তবে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে শত শত ড্রেজার বসিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে তা অবৈধভাবে বিক্রি এবং সম্প্রতি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের সুযোগে সরকারের কয়েকশ’ কোটি টাকা লোপাটের চেষ্টাকাÐে উঠে আসে সেলিম খান ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম।
প্রভাবশালী ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আতাউর রহমান সরকারকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছেন। সেলিম খানের সম্পদের অনুসন্ধানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কাছে নথিপত্র ও তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং ল²ীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানের নামে এবং তার স্ত্রী, সন্তান ও তার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের মালিকানাধীন নৌযানের সংখ্যা ও মূল্য সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের রেকর্ডপত্র এবং চাঁদপুরের মেঘনা নদী হতে বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সেলিম খানকে কোন অনুমোদন দেয়া হয়েছে কি না সে সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র তলব করা হয়েছে। এসব তথ্য আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার কাছে সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। দুদকের নির্দেশনা অনুযায়ী সেলিম খানের কোথায়, কি পরিমাণ সম্পত্তি আছে তা অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ে অনুসন্ধান শুরু করছে দুদক। দুদক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সেলিম খান ২০১৫ সাল থেকে মৎস্য চাষ করে আসছেন বলে অনুসন্ধানকালে তথ্য দাখিল করেছেন। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সেলিম খান কর্তৃক মৎস্য চাষ সংক্রান্ত তথ্যাদি ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে পর্যালোচনা প্রয়োজন। তাই সেলিম খান মৎস্য চাষ করেন কি না সে সংক্রান্ত তথ্যাদি, যদি করে থাকেন তাহলে কত সাল থেকে মৎস্য চাষ করে আসছেন, কি পরিমাণ জমিতে তার কতটি পুকুর রয়েছে, তার পুকুরে কোন কোন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়েছে এবং ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মৎস্য চাষে তার বিনিয়োগ ও মৎস্য চাষ হতে বার্ষিক সম্ভাব্য আয় সম্বলিত সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রয়োজন। এসব তথ্য আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর জন্য চাঁদপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৩ এপ্রিল রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান সরকার বলেন, আমাদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। চাঁদপুর ছাড়াও যেখানে যেখানে তার সম্পদ রয়েছে সবকিছুই এ অনুসন্ধানের আওতায় থাকবে। সকল রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে চাঁদপুর জেলার নদী অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এমনকি অনুমতি ছাড়াই তিনি বছরের পর বছর বালু বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। দীর্ঘ দিন অবৈধ বালু ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। আর অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ সম্পদসহ নদীর জীববৈচিত্র্য। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। ভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে প্রভাবশালী চক্র।
এ অবস্থায় চাঁদপুরের নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধে ভাঙনকবলিত মানুষ, জেলে ও জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেব্রæয়ারি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিআইডবিøউটিএ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামত ও চিঠির আলোকে সরকারি সম্পদ এবং ইলিশ রক্ষায় ভূমি মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নদীরক্ষা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
ওই চিঠির পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে সম্পৃক্ত অবৈধ নৌযান জব্দ ও চোরাই বালু বিপণন কার্যক্রমে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই মধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ও চেয়ারম্যান সেলিম খানকে গ্রেফতারের জন্য মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন নদীপাড়ের ভাঙনকবলিত মানুষ।
এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে সরকারের রাজস্ব দেয়া না হলেও চাপে পড়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রি বৈধ করতে গত ২২ ফেব্রæয়ারি সরকারি রয়্যালটি, ভ্যাট ও আয়কর বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ১৩ কোটি টাকা ৭১ লাখ টাকা দেওয়ার আবেদন করেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান।


এই বিভাগের আরও খবর