শিরোনাম:
মতলবে পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম, মালামাল লুট মতলব দক্ষিণে পরিত্যক্ত রান্নাঘর থেকে মরদেহ উদ্ধার মতলব উত্তরে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ মিছিল মতলব দক্ষিণে ভেটেরিনারি ফার্মেসীগুলোতে অভিযান, চাঁদপুরে সম্পত্তিগত বিরোধ : হাতুড়ির আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু মতলবে সরকারি গাছ নিধন: বনবিভাগ-এলজিইডির দোষারোপে জনরোষ মতলব উত্তরে নিশ্চিন্তপুর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত মতলব সরকারি কলেজে নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত আমিরা বাজার থেকে লতিফগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা চাঁদপুর ২ আসনের বিএনপি নেতা তানভীর হুদার রাজনৈতিক প্রচারণায় ডিজিটাল যাত্রা, চালু করলেন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

বেলাই বিলে বড় মাছের আকাল; দুশ্চিন্তায় মৌসুমী জেলেরা

reporter / ২৯০ ভিউ
আপডেট : বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০২২

মাহবুব আলম প্রিয়ঃ
রাজধানীর অদূরে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জের বেলাই বিল এক সময়ের মাছ আহরনের একমাত্র অঞ্চল হিসেবে ছিলো এর পরিচিতি। সবুজ গাছগাছালির গ্রামের মাঝখানে নীলজলের  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বেলাই বিল শুষ্ক মৌসুমে দেয় সোনালী ফসল। আর বর্ষায় দেয় কোটি টাকার মাছ। অন্যদিকে এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে  ইট পাথরের বন্দিদশা বেরিয়ে অনেকই ছুটে যান এই বিলের পাড়ে।
সূত্রমতে,  শ্রীপুর উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের দক্ষিনে, সদর উপজেলার বাড়িয়া ও পূবাইল ইউনিয়নের পূর্বে এবং কালিগঞ্জ উপজেলার জাংগালিয়া, বক্তারপুর ও তুমুলিয়া ইউনিয়নের পঁশ্চিমে ৩০ বর্গ কিঃমিঃ জুড়ে এ বেলাই বিলের ভৌগোলিক অবস্থান।
স্থানীয়দের বাসিন্দা ও জেলেদের দাবী, এক সময় এই বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এসব মাছের মধ্যে বড় আকারের বোয়াল, রুই,কাতলা,গ্রাসকার্প, চিতল, বাইম অন্যতম। শুধু তাই নয়, রাজধানী ও  গাজীপুর শহরের আশপাশের বাজারের মাছ বিক্রেতারা এ বেলাইয়ের মাছ বিক্রি করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে এখনো। কারন ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এ বিলের সুস্বাদু মাছের।
তুমুলিয়ার রাজনগর এলাকার বেলাই পাড়ের বাসিন্দা শাহজাহান গাজী বলেন, এ বিলে প্রচুর বড় মাছ পাওয়া যেত। তবে দিন দিন তা কমে যাচ্ছে। এক সময় এ বিলের মাছ নিয়ে স্থানীয় জামাইরা তাদের শশুড় বাড়ি বেড়াতে যেতো। আবার শশুড়রা মেয়ের বাড়ি মাছ নিয়ে দিতো। এভাবে বেলাইর মাছের চাহিদা ছিলো দেখার মতো।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন মাছ ধরার জন্য চলে আসে এই বিলে। তাই দিন দিন মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তবে অনেক স্থানে ভরাট হওয়ার দরুন শুকনো মৌসুমে বিলটি বোঁরো ও আমন শস্য ক্ষেতে পরিণত হয়।
 অপর একটি সূত্র জানায়, রাজকালী নারায়ন ও রাজা রাজেন্দ্র নারায়নের সময় ম্যানেজার স্টুয়ার্ড কৃষিতে সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বেলাই বিলের খাল পূনঃখনন ও সংস্কার করেন। তার নামে এখনো খালের নাম স্টুয়ার্ড খাল।
এদিকে বেলাই বিলে প্রচুর  শাপলা, শালুক, সিংরা ও কাচকলা পাওয়া যায়। যা আহরন করতে দেখা যায় স্থানীয় কিশোর ও তরুনদের মাঝে। বর্ষাকালে শাপলা ফুল আর কচুরি পানার সাথে নির্মল বাতাস বিলকে আর্কষনীয় করে তোলে। বর্ষাকালে বেলাই বিলে নানা প্রজাতির মাছ ও জ্বলজ উদ্ভিদ পাওয়া যায়।
বেলাইপারের কালীগঞ্জের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুল্লাহ মিয়া বলেন, বেলাই বিলের উৎপত্তি চেলাই নদী থেকে। এ বিলে রয়েছে অসংখ্য ডাঙ্গি।  আট বর্গমাইলের বেলাই বিলে বর্ষা মৌসুমে ডাঙ্গি খনন করে মাছ ধরেন স্থানীয় জেলেরা। ফলে সাধারণ লোকজনের নাগালে থাকে না বড় মাছ। সাধারণ লোকজন বিলে মাছ ধরতে নামলেও টেংরা,পুঁটি,মলা,ঢেলা ও ছোট চিংড়ি নিয়েই বাড়ি ফেরেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন,গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী এ বিলে ধ্বংস করতে একটি মহল  বালি ভরাট করে প্লট আকারে আবাসন প্রকল্প করার পায়তারা করছে। ইতোমধ্যে  তেপান্তর হাউজিং কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্লট বিক্রিও শুরু করেছে। আবার বের জাল ব্যবহার করে পেশাদার জেলেরা পোনা মাছসহ ধরে নিচ্ছো। ফলে কমে যাচ্ছে মাছ।
 এদিকে  আইনে জলাধার ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার কোনো সুযোগ না থাকলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্টে কাজ করার আশপাশের বাসিন্দারা বিভিন্ন দফতরে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়,কতিপয় আবাসন কোম্পানি তাদের বালি ফেলার জন্য বর্ষা মৌসুমকে বেছে নেয়। কারণ বর্ষা মৌসুমে বালি ফেললে তা নির্ধারিত জমির পাশে আরো কিছু জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। এসব কারনে বড় মাছগুলো চলে যায় জেলেদের ডাঙ্গিতে। ফলে সবখানে বড় মাছ পাওয়া যায়না।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হারিন্দা এলাকা থেকে বেলাই বিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের পাশের উপজেলায় এ বেলাই বিলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি। যাওয়ার সময় বড় মাছ কিনে নেই। কিন্তু এবার বড় মাছের দেখা নাই। স্থানীয় দুটি বাজারেও তা পাওয়া যায়নি। তাই হতাশ হয়ে কিছু ছোট মাছ কিনেছি।
বক্তারপুরের বাসিন্দা আশরাফুল আলম পাভেল বলেন, এক সময় বেলাই বিলের বড়  মাছ ধরে নিজেরাও খেতে পারতাম।  আত্নীয়দেরও দিতে পারতাম। অনেক সময় পাইকারদের কাছে বিক্রি করতাম। এখন অত মাছ পাওয়া যায় না।
ফুলদি গ্রামের বাসিন্দা এনায়েত কবীর বলেন, বেলাই বিলের মাছ নিয়ে দেশের আলোচিত জামাই মেলা হয়। আকারে বড় আর সুস্বাদু মাছ হওয়ায় চাহিদাও ব্যাপক। তবে দুঃখজনক যে, জামাই মেলায় মাছের উপস্থিতি রাখতে মাছ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাছ সংগ্রহ করে এ মেলায় নিয়ে আসেন। যা স্থানীয়রা জানলেও দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজন জানেনা। এটার কারন একটাই আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না।  কালীগঞ্জ বাজারের পাইকারি  মাছ বিক্রেতা মজিবুর রহমান আকন্দ বলেন,  এখনো বেলাই বিলের মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে কম পাওয়া যায় মাছ।  তাই দাম বেশি।  এ সময় তিনি আরো বলেন, বেলাই বিলে অবাধে বের জাল,ধর্মজাল ও কারেন্ট জালের ব্যবহার হয়। ফলে পোনামাছ ধরে নেয় জেলেরা। এতে মাছ বড় হওয়ায় সুযোগ পায়না। তাই মাছ কমে যাচ্ছে।  এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির দাবী করেন তিনি।


এই বিভাগের আরও খবর