মাহবুব আলম প্রিয়ঃ
স্বার্থ যখন তীব্রতা পায়, নেতা যখন স্বৈরাচারীতা আর তোষামোদ গ্রহণে অভ্যস্ত পাশাপাশি কর্মী বাধ্য হয় আঁতেল বা চামচা হয়। ঠিক তখনই ঘটে বিপত্তি। কেউ হয়ে ওঠে না যোগ্যতার বিচারে নেতা।আর কর্মী পায়না মুল্যায়ন। এভাবে যার টাকা, কৌশল আর ক্ষমতা থাকে সে হয় বড় নেতা অপরদিকে ওই নেতার সান্নিধ্যে আসতে কর্মীরাও নানা কৌশল অবলম্বন প্রয়োগ করে। সে কৌশলে কর্মী যখন কর্মে দূর্বল কিন্তু টাকায় আর চাপায় বেশ দাপুটে। তখন হয়ে ওঠে নেতার আনুগত্যশীল কর্মী। তখন নেতার সবকিছু ভালো লাগে। নেতার চলন,বলন, কথন আর রুচি হয়ে ওঠে আদর্শ। আদর্শ লিপির নীতিবাক্যগুলোও আর থাকে না বাস্তবে। এমনটাই দেখি ঘটে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সুশীল সমাজ দুশ্চিন্তায়। তারচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় যোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে। হোক তা রাজনৈতিক অঙ্গণে কিংবা সংগঠনে। কেউ একবার পদ বাগিয়ে নিলে চেয়ারে আঠা ধরিয়ে দেয়। সে আঠার এমন গুণ ক্ষমতা কবজা করা তার অন্যতম। এখন ভাববার বিষয় কর্মী কেন বঞ্চিত হয় আর আঁতেল হয়। রাজনীতির মাঠে দেশের প্রচলিত শব্দ এখন কাওয়া, হাইব্রিড, গাছ নেতা ইত্যাদি। আবার প্রশংসনীয় উপাধি ত্যাগি, দূর্দিনের কান্ডারী ইত্যাদি কথা৷ আর কর্মী যদি হয় বিশ্বস্ত তার ভাগ্যে অনেকাংশে সব সময় কর্মী থাকার ঘটনা কম নয়। বিশ্বস্ত কর্মীরা সাধারণত হয় নেতার প্রতি আনুগত্যশীল। তারা নেতার পরে নেতা হওয়ার অপেক্ষায় থাকে৷ নেতাকে টপকে নয়। এসব কর্মীদের মাঝে আবার কিছু আছে যারা নেতাকে টপকে বড় নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তবে নেতাকে টপকে যাওয়াদের মুলমন্ত্র থাকে কানপড়া৷
এবার আসি কানপড়া প্রসঙ্গে। শব্দটা আঞ্চলিক তবে প্রচলিত। ইসলামী দৃষ্টিকোণে কানপড়াকে চোগলখুরির সঙ্গে তুলনা করা যায়৷ যদিও চোগলখুরিকে কেউ কেউ চোগলামী বলে চিনে। আবার গীবতও বলা যায়৷ যার ধর্মীয় শাস্তির বিধান ভয়াবহ। আবার সামাজিক শান্তি, শৃঙ্খলা ধ্বস,পারিবারিক সুসম্পর্ক নষ্ট, বন্ধুত্বের অবসান ইত্যাদি সংকট তৈরী করে৷ আবার সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নষ্টেও কাজ করে এসব ভয়ংকর দুশ্চরিত্রের কর্ম।
বাস্তবতা হলো, নেতা নামীয় কতিপয় অমানুষ নিজেদের অধীনে থাকা কর্মীদের নিজের চাকরভাবে। তারা তাদের নির্দেশকে ব্যক্তিগত পর্যায় প্রয়োগ করে। শুধু তাই নয়, কর্মীদের কোনঠাসা করতে অলিখিতভাবে উপ দলে ভাগ করে নিজের মাতুব্বরি রক্ষা করে। এসব ভাগের হাতিয়ার কানপড়া। এক কর্মীকে উদ্দেশ্য করে অপর কর্মীর মিথ্যা তথ্যে গোপনে নেতা হয়ে ওঠে নাটাই ঘুরার কারিগরে। কানপড়ার ভাষাগুলো হয় এমন, আরে সে তো বস আপনার বদনাম করে। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। গতকাল দেখলাম, সে আমাদের বিপক্ষের লোকের সঙ্গে বসে চাপান করেছে। এসব কথা শুনে অনেক নেতা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়৷ আর কর্মীকে নানাভাবে হয়রানী করা হয়৷ অপবাদ অপমানে কর্মীকে দেয়া হয় দন্ড।
কানপড়া নেতা আর কর্মীর সম্পর্কে ফাটল ধরায় তা নয়। পারিবারিকভাবে ভাই বোন, চাচা মামা খালুসহ সব সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে আনায়াসে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কেও প্রভাব পড়ে কান পড়ায়৷
কানপড়াকে বলা হয় বিষ কথা। কানে বিষঢেলে দিয়ে এক পক্ষের ফায়দা হাসিলের চরম চরিত্রের নাম কানপড়া কথন।
অথচ মানবিক গুণাবলির মাঝে এমন চরিত্রের স্থান নেই। মানবিক আচরনে একে অপরের সুখের ক্ষেত্র তৈরী করে দেয়া৷ একে অপরকে আন্তরিক ভালোবাসার বিনিময়ে সৌহার্দ্যতা বাড়ানো। একের কাছে অন্যের নিরাপত্তা বিধান অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক- সাংবাদিক