শিরোনাম:
মতলবে পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম, মালামাল লুট মতলব দক্ষিণে পরিত্যক্ত রান্নাঘর থেকে মরদেহ উদ্ধার মতলব উত্তরে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ মিছিল মতলব দক্ষিণে ভেটেরিনারি ফার্মেসীগুলোতে অভিযান, চাঁদপুরে সম্পত্তিগত বিরোধ : হাতুড়ির আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু মতলবে সরকারি গাছ নিধন: বনবিভাগ-এলজিইডির দোষারোপে জনরোষ মতলব উত্তরে নিশ্চিন্তপুর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত মতলব সরকারি কলেজে নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত আমিরা বাজার থেকে লতিফগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা চাঁদপুর ২ আসনের বিএনপি নেতা তানভীর হুদার রাজনৈতিক প্রচারণায় ডিজিটাল যাত্রা, চালু করলেন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

ঘুষ এবং দুর্নীতি এখন সামাজিক ব্যাধি; প্রয়োজন নীতি নৈতিকতার চর্চা

reporter / ৩২১ ভিউ
আপডেট : সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মাহবুব আলম প্রিয়
  খুশি না করলে খুশি হবেন কেমনে? দাও আর নাও! এই যেন অঘোষিত নিয়ম। যত কাজ তত খুশি করার আয়োজন করতে হয়। বেশিরভাগ ঘুষ নেয়ার খাত হলো,  মামলার এজাহার, চার্জশিট,  মামলার ফাইনাল প্রতিবেদন , চার্জশিট বা এজাহারে নাম জড়াইয়া দেওয়া, হয়রানি মামলায় জড়ানো, তেল খরচ, মামলা তদন্তের নামে , জিডি  , ভয়ভীতি থেকে বাঁচা, ক্রসফায়ারের হাত হতে রক্ষা, সাক্ষী দেয়া ইত্যাদি পাতায় পাতায় আরো অজানা নানা খাতে ঘুষের চলে রমরমা বাণিজ্য।  আবার আছে বড়ো-ছোটো সাহেবের নামে কমিশন, অফিস সহকারীদের নামে হার। প্রকৌশলী অফিসে ইঞ্জিনিয়ারদের নামে, সিন্ডিকেটের নামে , দুই নম্বর কাজের বিনিময়ে বিল দেয়ার নামেও দেয়া হয় ঘুষ৷ শুধু তাই নয়,  শিক্ষা অফিসে শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন প্রাপ্তি, এমপিওভুক্তিকরণ, শিক্ষকের পেনশন তোলা—সব ক্ষেত্রে সচল ঘুষের বাজার। স্বাস্থ্য বিভাগের ক্ষেত্রে হাসপাতালে রোগী ভর্তি, অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ, সার্টিফিকেট প্রদান এমনকি লাশের ছাড়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রেও ঘুষের লেনাদেনা হয়।  আবার বিদ্যুত্ বিভাগে মিটার , সংযোগ, সংযোগ স্থানান্তর, ট্রান্সফরমার লোড বৃদ্ধিরসহ নানা খাত আর ফাইল আটকানোর অযুহাত।
দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে দরকার দক্ষ জনশক্তি। দেশের নাগরিকরা যদি নিজ যোগ্যতা এবং মেধার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ না পায় তাহলে উন্নয়নের স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত হয়।  ঘুষ এবং দুর্নীতি নামক সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে জাতি হয় দিশেহারা৷ যদিও ঘুষ এবং দুর্নীতির শিকার বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত প্রায় সব দেশই। এতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় ঘুষ এবং দুর্নীতি উন্নয়নের যথার্থ পথকে বিঘ্নিত করে।  যার প্রভাব পড়ে দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির ধারায়। সুষ্ঠু নীতিমালা, দক্ষ জনশক্তি এবং সঠিক নেতৃত্বে ভাটা দেখা দেয়।  কারন ঘুষের লেনাদেনার বদৌলতে মানুষের মতামতকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।  পরিণতিতে  বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ঘুষ এবং দুর্নীতি নামক রোগে আক্রান্ত। অতীতে ঘুষ আর দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়ে  হয়েছে একাধিকবার। তবে বর্তমানে অবস্থার উন্নতি হলেও ঘুষলেনাদেনা মুক্ত হতে পারেনি।
 দেশের সরকারী, বেসরকারী, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই ঘুষ কিংবা উৎকোচ ছাড়া কাজ হয় না । অবস্থাটা এমন অবসরপ্রাপ্ত কোন সরকারী কর্মচারী পেনশন নিতে গেলেও তার এক কালের সহকর্মীকেই ঘুষ দিয়ে ফাইল নাড়াতে হয়। এটাই যেন অলিখিত আর অঘোষিত নিয়ম। অথচ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার গতি রুদ্ধ করে এমন ঘুষ । ফলে দেশের সার্বিক অর্থনীতি চাপের মুখে পড়ে। বেকারত্ব বাড়ে, কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।  দক্ষ ও যোগ্য জনসাধারণ তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়। যোগ্য ব্যক্তি তার যথার্থ অবস্থানে টিকতেও পারে না। এর মাসুল গুনতে হয় পুরো জাতিকে। দেশের উৎপাদনশীল খাত হুমকির মুখে পড়ে, শিক্ষার মান কমে যায়, দক্ষ জনশক্তি গড়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায় তৈরি হয়। যা পুরো দেশের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ।
 ঘুষ ও দুর্নীতির বিরূপ প্রভাব, অর্থনৈতিক গতিশীলতা কমে যাওয়া এবং দেশের সামগ্রিক মানোন্নয়নে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াসহ আরও কিছু কারণকে থাকলেও তা কাগজে কলমের নীতির তালিকায় স্থান নেই।  এই সর্বনাশা অব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হিসেবে সততা, দক্ষতা এবং নীতি- নিষ্ঠতার ওপর জোর দেয়া আবশ্যক। আমাদের এই ব্যাধি থেকে মুক্ত হয়ে দেশকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সততা এবং কর্মদক্ষতার ওপর নির্ভর করে।
বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘুষের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা হইয়াছে। তথাপি ঘুষের কারবার হ্রাস পায় নাই। অফিসে অফিসে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি। কিন্তু কমেনি ঘুষের লেনাদেনা।  ই-ফাইলিং ও ই-টেন্ডারিং ইত্যাদির উদ্যোগও দেখা যায়। তবু বিশেষ কৌশলে  ঘুষের বাজার রমরমা। এখন টেবিলের নিচ আর হাতের মুঠোয় পুরে  অতি সতর্কতার সঙ্গে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া হয়।  এমনকি কী পরিমাণ ঘুষ প্রদান করিতে হইবে তাহা বুঝাইয়া দেওয়া হচ্ছে আকার-ইঙ্গিতে। নিয়োগ, ভর্তি, বদলি ইত্যাদি বাণিজ্য যথারীতি পূর্বের মতোই রমরমা। কোনো কাজের জন্য ঘুষের রেট কত তাহাও এখন মানুষের মুখে মুখে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (পিআইবি) এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন যে, ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা পেতে ৫শ হইতে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। একজন সাব-রেজিস্ট্রারকে বদলি করিতে ঘুষ দিতে হয় ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। ইহার জন্য আসলে একেক জায়গায়  একেক রেট। এদিকে পুলিশ বিভাগে ৫৬ খাতে তথা ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিতে হয়।  প্রবাদে আছে—সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দিব কোথা। ঘুষের রেট বাণিজ্যেরও একই অবস্থা। ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ  করতে হইলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নাগরিকদের সচেতন করতে ধর্মীয় উপাসনালয়ের সংশ্লিষ্ট উপদেশদাতাদের সক্রিয় ভুমিকা রাখতে হবে।
লেখকঃ সাংবাদিক


এই বিভাগের আরও খবর