শিরোনাম:
মতলবে পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম, মালামাল লুট মতলব দক্ষিণে পরিত্যক্ত রান্নাঘর থেকে মরদেহ উদ্ধার মতলব উত্তরে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ মিছিল মতলব দক্ষিণে ভেটেরিনারি ফার্মেসীগুলোতে অভিযান, চাঁদপুরে সম্পত্তিগত বিরোধ : হাতুড়ির আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু মতলবে সরকারি গাছ নিধন: বনবিভাগ-এলজিইডির দোষারোপে জনরোষ মতলব উত্তরে নিশ্চিন্তপুর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত মতলব সরকারি কলেজে নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত আমিরা বাজার থেকে লতিফগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা চাঁদপুর ২ আসনের বিএনপি নেতা তানভীর হুদার রাজনৈতিক প্রচারণায় ডিজিটাল যাত্রা, চালু করলেন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

জনগণের বন্ধু পুলিশ; প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির খাতা

reporter / ৩৬৬ ভিউ
আপডেট : সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মাহবুব আলম প্রিয় 
‘পুলিশ জনতা,জনতাই পুলিশ’ এমন স্লোগান নিয়ে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহীনি পুলিশের কার্যক্রম চলমান। আবার ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু ‘ কথাটির সঙ্গে আমরা সুপরিচিত। প্রশ্ন হলো, উপরের দুটো স্লোগান আর বাস্তবতার মিল কতটুকু?বা গড়মিল কতটুকুই?  এ প্রসঙ্গে বলতে গেলে যা দেখি তা হলো স্বাধীনতা পরবর্তি বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে গৌরবোজ্জল সোনালী ইতিহাস। দেশের আইন শৃঙ্খলা ছাড়াও সকল পরিস্থিতিতে মাঠে থেকে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পাশপাশি জনগণের নিরাপত্তায় অনেকটা সফলভাবে কাজ করছে এ বাহীনি। তবুও ব্যর্থতা কম নয়৷  কারন, পুলিশ ব্যবহৃত হচ্ছে আজকাল  রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে।  সব সরকার চায় এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তা। যারা বিনা বাক্যব্যায়ে সরকারের নির্দেশ পালন করবে। তাই  পুলিশের নিয়োগ হয় অনেক ক্ষেত্রে অলিখিতভাবে  রাজনৈতিক ইচ্ছায়। তাই  স্বাধীনচেতা,অরাজনৈতিক কেউ অফিসার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে পারেন না।যদিও ঢালাওভাবে একথা বলা যায় না।  মানবাধিকার সংগঠনগুলো বরাবরই এমন তথ্য দিয়ে আসছেন যে, বিগত দিনে বড় নেতা যে  জেলার সে বিশেষ জেলার বাসিন্দা  পুলিশ কর্মকর্তার কারণে পুলিশের চেইন অব কমান্ড নষ্ট হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন  মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন।  জনগণের মতামতের মুল্যায়ন না হলেও দুর্বল দলও  টিকে যায় পুলিশের মারমুখী ভূমিকায়।আর সরকারের নির্দেশ পালন না করলে পুলিশের আবার চাকুরী রাখে কে?  এমন অবস্থায় পুলিশ বাহিনীর কাছে আমাদের আম জনতার প্রত্যাশা যাই আছে প্রাপ্তিও কম নয়। তবে প্রাপ্তির খাতায় গড়মিল থাকলেও তা প্রকাশের মতো পরিবেশ নেই৷
এর দায় কি  পুলিশ বাহিনীর? নাকি  আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশের?   আমার মতে, এমন দায় রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার লোভ। আর কতিপয় পুলিশের পদোন্নতির লোভ। যা কারোরই সামলানো বা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই। যখন লোভ দূর করা যায় না। তবে একটা সত্যিকার কল্যাণমুখী রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলে প্রাপ্তির খাতায় যোগ হতো ভালো কিছু । তারা নুন্যতম জনগণের বন্ধুকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের সুযোগ পেতো না।
 অথচ  সত্যিকার কল্যাণমুখী রাজনৈতিক দলের অভাব দেখা দেয়ায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ বাহীনিকেও  নিজের মতো  ব্যবহার চেষ্টা করা হয় দুঃখজনকভাবে।
আমাদের সমাজে কথায় কথায় পুলিশের উপর দায় দিতে দেখি।  পুলিশকে দাড় করাই জনতার কাঠগড়ায়। তাদের পিন্ডি চটকায় ব্যাংক লুট করা বড় ব্যবসায়ীরা।  অথচ সমাজের ভয়াবহতম ব্যাধিছড়ানো কতিপয় স্বাস্থ্য বিভাগের  ইনভেস্টিগেশন করতে দেয়া ডাক্তার, অর্থলোভী  ‘হলুদ’ সাংবাদিক,  দুই নম্বরী ব্যাল্যান্স শীট বানিয়ে ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিতে সাহায্য করা একাউন্ট্যান্ট,আইনজীবী,  ঘটি বাটি বিক্রি করে মানুষকে নিশ্চিত হেরে যাওয়া মামলা করানো উকিল,  স্কুলের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাসায় কোচিং ব্যবসা করা শিক্ষকদের উপর সমাজ দায় চাপাচ্ছেন না। যারা রন্ধ্রে রন্ধ্রে অন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রকাশ্যে কাজ করছে। তাদের সমালোচনার তুলনায় পুলিশের সমালোচনা হয় অধিকহারে। আর সব দায় যেন পুলিশের ঘাড়ে।  প্রশ্ন হলো,  পুলিশের পিন্ডি চটকায় না কে? পুলিশকে দিয়ে অনেকের প্রাপ্তি কম হতে পারে। কারন, পুলিশকে নানাভাবে ভুল তথ্য দিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজ করানোর প্রবণতা বেশি। তাই তাদের কাছে প্রাপ্তির যোগ থাকবেনা।
যারা পুলিশের কাছে অনেক কিছু চেয়েছেন, পুলিশকে নানান ভালো নসিহত করেছেন, সমালোচনায় অংশ নিচ্ছেন তাদেরকে  বলতে চাই। পুলিশ কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়,ভীন গ্রহের প্রাণী নয়।  পুলিশ এই সমাজেরই অংশ। যে সমাজের কতিপয় নাগরিক  পঁচে যায়, সেই সমাজের অংশ দু’একজন পুলিশের মধ্যে পঁচন ধরবে না, এমন  প্রত্যাশা স্রেফ মুর্খতা। আগেই বলেছি, কারো কারো ধারণা শুধু সরকারী সেক্টরে পঁচন ধরেছে।  বাস্তবে তা নয়,  দেশী বা মাল্টিন্যাশনাল, সব প্রতিষ্ঠানে ভীষণরকম দুর্নীতি ঢুকে গেছে।
হ্যাঁ, এটা মানি পুলিশ একটা সংবেদনশীল অবস্থানে দায়িত্ব পালন করে, তাই মানুষের ক্ষোভ-ঊষ্মা পুলিশের ওপর অনেক বেশী। কিন্তু আমাদের উচিৎ আবেগকে সরিয়ে বিবেক দিয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া এই পঁচন সরানোর কাজ করা।  অবশ্য বলাই হয়, বিবেকবোধটা আমাদের মধ্যে কমই আছে। তাই জনগনের কাছে পুলিশ বরাবরই হয় বলির পাঁঠা। আর পুলিশই বা কম কিসে? অনেক অফিসাররাই নিজেকে স্যার না বললে জনগণের উপর ক্ষিপ্ত হয়। ওদের অনেকেই সরকারী চাকুরী, পকেটে কলম, মামলার ফাইল আর কোমরে পিস্তল পেয়ে নিজেকে মস্ত পালোয়ান ভেবে সংশ্লিষ্ট কর্মস্থলে আতঙ্ক ছড়ায়। তাদের উর্ধতন কর্মকর্তা আত্নীয় বলে সাধারণ পুলিশ সদস্য কিংবা সেবা নিতে আসা লোকজনের প্রতি বৈরী আচরন করে। নির্যাতনের অভিযোগও কম নয়।
এখন প্রশ্ন এর সমাধান কী?  পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে পুলিশকে সাধারণ মানুষের আরো কাছে প্রবেশ করার চেষ্টা করার নির্দেশ রয়েছে ইদানীং শুনা যায়। কিন্তু কতটুকু জনগণের অন্তরে প্রবেশ করলো?
আজকাল রাজনৈতিক মিছিল মিটিংএ নাশকতার ও হামলা ঠেকাতে পুলিশের সক্রিয় ভুমিকা দেখা যায়। এতে সরকারি দলের জন্য একরকম আচরন আবার বিরোধী দলের অভিযোগ ভিন্নরকম। এখানে সেবা প্রাপ্তিতে সরকারী দল পুলিশকে শতভাগ নম্বর দিলেও বিরোধী দল কত দিবে? তাই প্রাপ্তির খাতায় এমন গড়মিল থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
তাই পুলিশকে জনবান্ধন ও জনতার গড়ে তুলতে অবশ্যই  নাটকে বা সিনেমায় নেগেটিভ ভাবে পুলিশের চিত্রায়ন বন্ধ করতে হবে।  জনগনের মনে পুলিশ ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন চলচ্চিত্র বন্ধ করতে হবে। জনগণের সেবা দিতে যাওয়া পুলিশ শুধু যে জেরা করবে তা নয়। তাদের ভাষায় থাকতে হবে মাধুর্য।
কিন্তু কি দেখি,  কথায় আছে, হাতে অস্ত্র থাকলে নাকি মাথা কাজ করে কম, ইচ্ছে করে সব কিছু গায়ের জোরে করে। পুলিশ ভাইদের যারা এমন করবে তারা কি কখনো জনতার হতে পারবে?
 তাই পুলিশের উচিত তাদের সমস্যা স্বীকার করে সমাধানের জন্য কাজ করা।
তবে আমি মনে করি যাবতীয় সমস্যার সমাধান আছে ‘সঠিক রাজনীতি’র কাছে। আমাদের জীবনের অতি ক্ষুদ্র, তুচ্ছ সমস্যাকেও আমি রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত করি, আর মনে করি সঠিক রাজনীতি না আসলে এসব ক্ষুদ্র সমস্যারও স্থায়ী সমাধান হবে না।
আসলেই আমাদের এতো পচন চারদিকে কারণ, আমাদের রাজনীতিটাই পচে গেছে। রাজনীতির পচন বন্ধ না হলে, একটা সুস্থ রাজনৈতিক ধারা আমাদের দেশে সৃষ্টি না হলে পুলিশের পচন (সাথে অন্যসব পচন) রোধ করা যাবে না কোনভাবেই।
 পরিশেষে বলি, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা বাংলাদেশ পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এই সংস্থা যাবতীয় অপরাধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের পাশাপাশি জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় নিবেদিত। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে ঢাকায় গণহত্যা শুরু করলে পুলিশ বাহিনীই রাজারবাগে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সবশেষ যে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি আঘাত করেছে, এই সংকটেও দেশবাসী সর্বাগ্রে দেখছে পুলিশকে।
পথচলার পর থেকে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি গত এক দশকে জঙ্গিবাদ দমন এবং নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযানেও বাহিনীটির রয়েছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। মাদকের বিস্তার রোধ ও সাইবার ক্রাইমের মতো অপরাধ দমনেও পুলিশ যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুপরিচিত। জাতিসংঘের আওতায় পৃথিবীর বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। আরো নানা সাফল্যের অংশিদার এ বাহীনির কতিপয় দূর্নীতিবাজের জন্য ম্লান হতে পারে না। আমার মোদ্দাকথা হলে, আমাদের পুলিশ, আমাদের জন্যই পুলিশ। আমাদের নিরাপদ নগর উপহার দিতে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা জনগণের কাজ হলো তাদের  সহযোগিতা করা। তাদের সহযোগিতার নিতে গিয়ে প্রভাবখাটানো বন্ধ করা। তবেই জনসাধারণের প্রাপ্তির খাতায় যোগ হবে আশার আলো।
লেখক- সাংবাদিক


এই বিভাগের আরও খবর