বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গত ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে সমাবেশে যোগদান করতে আসার পথে বিকাল তিনটায় বাহাদুরপুর গ্রামে কাজী মতিনের গুলিতে যুবলীগ নেতা মোবারক হোসেন বাবু নিহত হয়। উক্ত ঘটনার মাস্টারমাইন্ড কাজী মিজানসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সাতজন হলেন কাজী মিজানুর রহমান পিতা কাজী আবুল হোসেন , ছাবিয়া বেগম স্বামী কাজল সরকার , মুছা গাজী পিতা শাহজাহান ,আনোয়ার শেখ পিতা জমির আলী শেখ ,জুয়েল কবিরাজ পিতা মনির কবিরাজ, মোশাররফ মিজি পিতা মকবুল মিজি ,শাহীনা বেগম স্বামী ছৈয়দ মিজি। এরমধ্যে কাজী মিজান, ছাবিয়া বেগম ও মুছা গাজী এজাহার নামীয় আসামী।
মোবারক হোসেন বাবু’র হত্যার ঘটনায় তার আপন ছোট ভাই আমির হোসেন কালু মতলব উত্তর থানায় গতকাল ১৮ জুলাই তারিখে নিজে হাজির হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা আরোও ৩৫/৪০ জন নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মতলব উত্তর থানার মামলা নং ২০,দন্ডবিধির১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩৪১/৩২৩/৩০২/৩৪/৫০৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা কে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশের আয়োজন করা হয় এবং সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম। উক্ত সমাবেশে যাতে কেউ উপস্থিত হতে না পাারে সেই লক্ষ্যে স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সদস্য কাজী মিজানের ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিজে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে এবং গত শুক্রবার (১৬জুলাই) বাহাদুরপুর গ্রামে চান্দু বেপারীর ছেলে বাবুল বেপারীর ঘরে দুপুর ২ টায় কাজী মিজান তার লোকজন নিয়ে পরিকল্পনা করে পরদিন শনিবার ( ১৭ জুলাই) দুপুরে বাহাদুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কাজী মতিনের নেতৃত্বে গুলিবর্ষণ করে এবং সশস্ত্র অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবলীগ নেতা মোবারক হোসেন বাবু আহত হয়।পরে স্থানীয় লোকজন মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করে এবং আরো ৫ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা যায়।
গতকাল রোববার (১৮ জুন) চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে একই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় মোহনপুর কাজী বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা কে হত্যার হুমকির প্রতিবাদ সমাবেশে কাজী মিজানের নির্দেশে কাজী মতিনের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয় তিনজন। পরে তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে যুবলীগ কর্মী মোবারক হোসেন বাবুকে মৃত ঘোষণা করেন মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক। গুরুতর আহত ইমরান বেপারী ও জহির কবিরাজকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
পুলিশ জানান, শনিবার (১৭ জুন) বিকেলে উপজেলার মাথাভাঙা হাইস্কুল মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। পরে এই সমাবেশে মিছিল নিয়ে যোগ দিতে আসার পথে মায়া চৌধুরীর প্রতিপক্ষ কাজী মিজানের সশস্ত্র বাহিনী হামলা করে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন বাবু ও তার ছেলে। পরে স্থানীয় নেতারা বাবুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।
পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বলেন, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহত মোবারক হোসেন বাবু’র জানাজা শেষে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে এবং তার কুশ পুত্তলিকা দাহ করে।
নিহতের ভাই আমির হোসেন কালু বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মিজানের কর্মীরা মায়া চৌধুরীর সমাবেশে আসার পথে বাঁধা প্রদান করে ও প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করেছে।
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিন জানান, নিহত মোবারক হোসেন বাবুর ভাই আমির হোসেন কালু বাদী হয়ে মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মিজানকে প্রধান আসামী করে ৩১ জনের নাম প্রকাশ করে
মতলব উত্তর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আর ওই মামলায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ হত্যা মামলার প্রধান আসামী কাজী মিজানকে আটক করে চাঁদপুর নিয়ে গেছে।
স্হানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায়, কাজী মিজান তার নিজ এলাকায় নানা অপরাধের সাথে জড়িত। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে সে রাতারাতি কোটি বে যায়। সে বিএনপির আমলে মরহুম নুরুল হুদার একান্ত কাছের আস্হাভাজন ছিল। তারপর সে আওয়ামীলীগের আমলে ঘোর নৌকার সমর্থক রাতারাতি হয়ে যান। কাজী মিজান নিজের সকল অপকর্ম মাটিচাপা দিতে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংবাদ সারাবেলা নামের আণ্ডারগ্রাউন্ডে সংবাদ পত্র কিনে তার মালিক হয়ে নিজেকে সম্পাদক দাবী করেন।