শিরোনাম:
মতলবে পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম, মালামাল লুট মতলব দক্ষিণে পরিত্যক্ত রান্নাঘর থেকে মরদেহ উদ্ধার মতলব উত্তরে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ মিছিল মতলব দক্ষিণে ভেটেরিনারি ফার্মেসীগুলোতে অভিযান, চাঁদপুরে সম্পত্তিগত বিরোধ : হাতুড়ির আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু মতলবে সরকারি গাছ নিধন: বনবিভাগ-এলজিইডির দোষারোপে জনরোষ মতলব উত্তরে নিশ্চিন্তপুর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত মতলব সরকারি কলেজে নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত আমিরা বাজার থেকে লতিফগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা চাঁদপুর ২ আসনের বিএনপি নেতা তানভীর হুদার রাজনৈতিক প্রচারণায় ডিজিটাল যাত্রা, চালু করলেন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

“শোক আজ শক্তিতে রূপান্তরিত “

reporter / ৪৩৪ ভিউ
আপডেট : রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২

জেসমিন সুলতানাঃ
আগষ্ট মাস সমগ্র  বাঙ্গালী জাতির জন্য শোকের মাস,হৃদয়ের রক্তক্ষরনের মাস,প্রিয়জন হারিয়ে ব্যথাতুর হৃদয়ের ক্রন্দনের মাস।
 ১৫ই আগষ্ট আমরা হারিয়েছি সর্বকালের, সর্বহৃদয়ের, সর্বশ্রেষ্ঠ  মহামানব, বাঙ্গালী জাতির নেতা,  স্বাধীনতার স্বপ্ন দ্রষ্টা,দিকনির্দেশক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানকে।
 শত যুগ পরেই এমন মহামানবদের আবির্ভাব  হয় পৃথিবীর বুকে  যারা মানুষের মনের মনিকোঠায়  স্হায়ী ভাবে আসন পেতে থাকেন।
 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা পূর্ব  তিনদশক কাটিয়ে দিয়েছিলেন জেল,জুলুম,অত্যাচারের ভিতর দিয়ে।তাঁর  চিন্তা চেতনা, মনন ছিলো  বাঙ্গালী জাতির কল্যানে।
” একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েইআমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সাথে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীর ভাবে ভাবায়। এই যে নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালবাসা,অক্ষয় ভালবাসা,যে ভালবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে”
অসমাপ্ত আত্মজীবনী
– শেখ মুজিবুর রহমান।
  তিনি ভাবতেন বাঙ্গালির কথা। সূর্য  যেমন তার অফুরন্ত দীপ্ত রশ্মি জ্বেলে সমগ্র বিশ্বকে উদ্ভাসিত করে তেমনি বাঙালী জাতিকে নিজস্ব সত্ত্বা নিয়ে মাথা সোজা করে দাঁড়ানোর জন্য  সূর্যের ন্যায় আলোক বর্তিকা হাতে এসেছিলেন  মহাপুরুষ,সিংহ পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসের মহানায়ক তিনি। বাংলাদেশ  নামক স্বাধীন বদ্বীপ  সৃষ্টিতে তাঁর অবদান অস্বীকার করার অর্থ হলো নিজের জন্মকে ও অস্তিত্ব অস্বীকার করা।
 বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি বার  বার কারা বরন করেছেন। চার হাজার ছয়শত বিরাশি দিন,প্রিয়জনকে না পাওয়ার বেদনায় বেদনাতুর ছিলো তাঁর পরিবার ও গোটা বাংলাদেশ। তিনি চেয়ে ছিলেন বাঙ্গালী  জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি,শিক্ষা ও সংস্কৃতির মুক্তি , গনতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী জীবনাচরণের সর্বোপরি স্বাধীন  সার্বভৌম বাংলাদেশ।
  ১৯৪৩ সন থেকে স্বকীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহন করার পর থেকেই তাঁর চিন্তা,চেতনায় ছিলো অসহায়  দুঃখী বাঙালিকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করে মানুষের মৌলিক অধিকার গুলো নিশ্চিত করা। তিনি করেছিলেন ও তাই। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙ্গালি জাতি   যার কিছু  আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরেছিলো মহান মুক্তি যুদ্ধে।ত্রিশ লক্ষ প্রানের বিনিময়ে আড়াইলক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার  পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যখন এগিয়ে চলছিলো উন্নয়নের পথে  সে সময় স্বাধীনতার ৩ বছর সাত মাসের মাথায় দেশী ও বিদেশীদের চক্রান্তে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট সেনাবাহিনীর একদল ক্ষমতা লিপ্সু,বিপথগামী হায়েনার দল  স্বপরিবারে হত্যা করে বাঙ্গালী জাতির প্রান  বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান কে সহ পরিবারের ২৬ জন সদস্যকে।
এ হত্যা কান্ডের মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতির  কপালে এঁকে দেয়  তারা কলংকের কালো তিলক।
ঘাতকদের মূল টার্গেট ছিলো বঙ্গবন্ধু পরিবার।  নিকটাত্মীয়দের  সহ ২৬ জনকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে  বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে কালো অধ্যায়ের রচনা করলো তারা। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি।
  হত্যা করেছে৷ মহিয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে যিনি নিভৃতে থেকে দিয়েছিলেন শক্তি আর প্রেরনার আলোক বর্তিকা ।
বঙ্গবন্ধুর  তিন পুত্র শেখ কামাল,শেখ জামাল,শিশু  শেখ রাসেল,পুত্র বধু পারভীনজামাল রোজী,সুলতানা কামাল,  বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ নাসের, ভাগ্নে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বর্তমানে  আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান  শেখ ফজলে শামস পরশ ও ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন মেয়র ব্যরিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এর পিতা     শেখ ফজলুল হক মনি এবং মাতা  অন্তঃসত্তা স্ত্রী আরজু মনি,  ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত,তার কন্যা বেবী  সেরনিয়াবাদ,পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু,সহীদ সেরনিয়াবাদ,আত্মীয় রিন্টু খান,এস বি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান,কর্নেল জামিল,সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক কেউ বাদ যায়নি তাদের পিশাচদের হাত থেকে।
তবে রাখে আল্লাহ মারে কে? বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের স্বপ্ন সারথি,আমাদের বাতিঘর,বাঙ্গালী দের   অন্তঃ প্রান মাননীয় প্রধানমত্রী শেখ হাসিনা এবং ছোট বোন শেখ  রেহানাকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলেন অকৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির হাল ধরার জন্য।
১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট স্ব পরিবারে   বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই  বন্ধ থাকেনি গভীর ষড়যন্ত্র।। পৈশাচিক  নারকীয় হত্যাকান্ডের পর  দেশ চলে যায় নষ্টদের  দখলে। চরিত্র হীন,নৈতিকতা হীন,পিতামাতাহীন,দেশপ্রেম হীন,উদ্বাস্তু র দল আরোহন করে ক্ষমতায়।   খুনী জিয়া, মুশতাকের দল অসাংবিধানিক উপায়ে অবৈধ পথে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেই বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পাশ করে ঘৃন্য, জঘন্য,  কালো আইন ইন্ডিমিনিটি বিল।
তারা জাতির পিতার খুনিদের, স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার,আলবদর দের মন্ত্রী বানিয়ে,  বিভিন্ন দূতাবাসে চাকুরী দিয়ে,পদায়িত করে আশ্রয়, প্রশ্রয়  দিয়ে পুরস্কৃত করেছে।
পারেনি নিকৃষ্ট,ক্ষমতালিপ্সুর দল তাদের কাল আইনকে কার্যকর করতে। বাঙালি  জাতির দিশারী বঙ্গবন্ধু কন্যা সরকার গঠন করে ঘৃন্য, জঘন্য কালো আইনটি বাতিল করেন।
 শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার। বঙ্গবন্ধুর নিবেদিত প্রান  বিজ্ঞ আইনজীবী গন সুন্দর ভাবে দক্ষতার সাথে মামলা পরিচালনা করেছেন, ঘাতকদের বিচার হয়েছে, ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
বিচারের রায় কার্যকর হওয়ায় বাঙ্গালি কিছুটা হলেও দায়মুক্ত। বর্তমানে কিছু পলাতক বিভিন্ন দেশে ফেরারী  হয়ে পালিয়ে আছে তাদের ফাঁসির  রায় কার্যকর করার মাধ্যমেই জাতি সম্পূর্ন  দায় মুক্ত হতে পারে।। আজ একটি  প্রশ্ন মাথায় কেন তাদের এনে ফাঁসি  কাষ্ঠে ঝোলানো যাচ্ছেনা।
১৫ ই আগষ্ট  জাতীয় শোকের দিন।। এ শোক আজ শক্তিতে রূপান্তরিত।। বঙ্গবন্ধু কন্য শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমত্রী। তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল  দেশে রূপান্তরিত করছেন।
দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের দুর্বার গতিতে।
কিছু চোর,ঘুষখোর,,দূর্নীতিবাজ,অর্থপাচারকারী, বালুখোর, অসৎ লোক না থাকলে দেশ আজ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ  উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হতো।
 আমাদের প্রিয় স্বপ্নের  পদ্মা সেতু  উদ্বোধন হয়েছে।প্রতিদিন কোটি কোটি  টাকা টোল আদায় হচ্ছে। স্বপ্নের  সেতু পারহয়ে প্রতিদিন  হাজারো  মানুষ ভীড় করছে বাঙ্গালী র পীঠস্হান জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর  মাজারে। সবাই মহান আল্লাহ পাকের দরবারে হাত তুলে প্রানভরে দোয়া করছে।
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি আজ প্রতিটি  বাঙ্গালীর  কাছে শ্রদ্ধা,  ভালবাসা ও ভাললাগার স্হান।
হায়রে ঘাতকের দল তোরা  বুঝতে পারিসনি ঢাকা শহরে বঙ্গবন্ধুর সমাধি  হলে এতো লোক কোথায় দাঁড়াতো প্রতিনিয়ত, প্রতিদিন। স্বপ্নের সেতু  পার হয়ে হাজারো বাঙ্গালির  গন্তব্য  আজ ঐ পূন্যভূমিতে।
     বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে  কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা নিবেদিত প্রান। তিনি তার লক্ষ স্হির করে দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন বলেই  নিজস্ব অর্থায়নে হয়েছে  ৫৬০ টি মডেল মসজিদ নির্মান, আশ্রায়ন -১, প্রকল্পে সোয়া লাখ,  আশ্রায়ন-২ প্রকল্পে বত্রিশ হাজার চারশ নয় জন গৃহহীনে গৃহ দান,জমি দান, ফ্লাইওভার,  মেট্রোরেল,,বিদ্যুতের স্বয়ংসম্পূর্নতা,  পাতাল ট্রেন , ডিজিটাল বাংলাদেশে ইন্টারনেট সুবিধা,  করোনা সময়েও শতভাগ শিক্ষায় সফলতা, দারিদ্র সংকট মোকাবিলা,নারীর ক্ষমতায়নও সফল বাস্তবায়ন,কাউকে অপরাধে ছাড় না দেয়া,   গোদের উপর বিষফোঁড়া দশলাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দান তাদের ভরনপোষণ , মাদক বিরোধী অভিযান,সন্ত্রাস ও জঙ্গী  বিরোধী অভিযান, দূর্নীতিতে জিরোটলারেন্স, কোটি কোটি বাঙ্গালীকে করোনা প্রতিরোধ টিকা প্রদান সহ   সব ক্ষেত্রেই তিনি সফল।
সব কিছুতেই  সজাগ ও সুক্ষ দৃষ্টি রয়েছে স্বপ্ন দ্রষ্টা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী হাসিনার।  সব শুভদৃষ্টি, সব ভালবাসা, সবটুকু স্নেহ  উজার করে ঢেলে দিয়েছেন বাঙালীর জন্য।। তিনি শুধু সরকার প্রধানই নন তিনি মানবিক গুন সম্পন্ন অনন্য ও অসাধারন এক  বিরল ব্যক্তিত্ব।।গন মানুষের নেতা বলেই একজন মানুষকেও করোনা মহামারীতে না খেয়ে, না পরে মরতে হয়নি, বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের   চেয়ে কোন অংশে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ।
 রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারাপৃথিবী জুড়েেই অস্হিরতা তেল ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধি  যার প্রভাব আমাদের  দেশে আসবে এটাই স্বাভাবিক। বাঙ্গালী  জাতি সব পারে,সবংসহা জাতি  এসব সামান্য  প্রতিকূলতাও কাটিয়ে  উঠবে বাংলাদেশ।
 মিথ্যা অনেকে দীবা স্বপ্ন দেখছেন  ক্ষমতায় যাওয়ার,নষ্টদের হাতে হারাবেনা বাংলাদেশ ।
জাতিকে  মিথ্যা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না করে সবাই সত্যকে তুলে ধরুন।।দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সবাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।।
১৫ ই আগষ্টের এই দিনে শ্রদ্ধা ভরে স্মরন করছি এই দিনে নিহত মহান শহীদ দের,  সারা পৃথিবী  শ্রদ্ধা ভরে স্মরন করছে স্বাধীনতার মহান স্হপতিকে। এ শোক আজ মহাশক্তি,সে শক্তিতে  দূর্বার গতিতেএগিয়ে চলুক সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা,শ্যাম কুন্তলা,সাগর মেঘলা আমার সোনার বাংলাদেশ।
শোক দিবসে   সবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সকল মহান শহীদদের আল্লাহ পাক জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।
জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখকঃ
জেসমিন সুলতানা
এডভোকেট 
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।


এই বিভাগের আরও খবর