নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে আদালতে মিথ্যা মামলার আবেদন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান। তার পক্ষে মঙ্গলবার (২২ মার্চ) চাঁদপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশি মামলার আবেদন করেন সেলিম খানের মালিকানাধীন সেলিম এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার আব্দুল কাদির। পরে মামলার আবেদনটি খারিজ করে দেন আদালত।চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সমকালের চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি ইকবাল পাটোয়ারী এবং বাংলা ট্রিবিউনের চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি ইব্রাহীম রনির বিরুদ্ধে এ মামলার আবেদন করা হয়। কিন্তু সত্যতা না পাওয়ায় ২০৩ ধারায় মামলার আবেদনটি খারিজ করে দেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামাল হোসাইন।জানা গেছে, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনকারীদের গ্রেফতারে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করায় এই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলার আবেদন করা হয়। আবেদনে যার মানহানির অভিযোগ করা হয়েছে মামলায় সেই সেলিম খানকেই সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে।মামলার আবেদনে অভিযোগে করা হয়, ২২ মার্চ চাঁদপুর প্রতিদিনে প্রকাশিত ‘চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত নৌযান জব্দ ও জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এই সংবাদের ভেতরে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নাম উল্লেখ করে সেলিম খানের নামে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়।অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সংবাদে ‘২০১৫ সাল থেকে পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে আসছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের একটি চক্র’। নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘আদালত তাদেরকে কয়েকটি নির্দিষ্ট মৌজায় ড্রেজিংয়ের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু সেই মৌজাগুলো কোথায় তার কোন ম্যাপও তাদের কাছে নেই’।জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে লেখা হয়, ‘তাছাড়া আদালত তাদেরকে বালু বিক্রির আদেশ দেননি।’ ‘চাঁদপুর জেলার নদী অঞ্চল থেকে গত কয়েক বছর ধরে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে’। কিন্তু সেলিম খান আদালতের নির্দেশ মোতাবেক নিয়মতান্ত্রিকভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন বলে মামলার আবেদনে দাবি করা হয়। সংবাদে উল্লেখিত এসব বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়।মামলার আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান বলেন, ‘এ বিষয়ে পরে কথা বলবো’ বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।সাংবাদিক ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত নৌযান জব্দ ও জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে নদী রক্ষা কমিশন। আমরা নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীর বক্তব্য এবং নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদটি করেছি। তাছাড়া অন্যান্য যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলোও ইতোমধ্যে প্রশাসনসহ সবাই জানে এবং তা প্রমাণিত। মূলত ইলিশসহ সরকারি সম্পদ রক্ষায় বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে যারা সংবাদ করছে, তাদের দমিয়ে রাখতে এই মামলার আবেদন করা হয়েছে। তবে তারা মামলা করে সত্য প্রকাশ থেকে আমাদের বিরত রাখতে পারবে না।’এ বিষয়ে সাংবাদিক ইব্রাহীম রনি বলেন, ‘চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা খুবই প্রভাবশালী। কিন্তু সংবাদকর্মী হিসেবে অনিয়ম-দুর্নীতি এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য এবং নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ করেছি। সংবাদে কারও বিপক্ষে মানহানিকর কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নদী রক্ষা কমিশনসহ সংশ্লিষ্টরা নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেসব বিষয় সংবাদে তুলে ধরেছি।’