মো.মজিবুর রহমান রনিঃ
যে সন্তানকে জন্ম দিয়ে বড় করে তুলেছেন, সেই সন্তানই বাবাকে অত্যাচার করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। জীবন সায়াহ্নে এসে রাস্তায় রাস্তায় বসবাস করছেন অসহায় বাবা। বৃদ্ধ বাবার শরীরের নানান জায়গায় দগদগে লাল চিহ্ন (আঘাত) নিয়ে ঘুরছেন পথে পথে। বয়স হয়ে যাওয়ায় আয় রোজগার করতে না পেরে নিজের সন্তানদের কাছে ভরণপোষণ চান বাবা সৈয়দ আলী (৮০)। কিন্তু তার ১ ছেলে, ছেলের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও নিজ সহধর্মিনি দেখভালের দায়িত্ব না নিয়ে উল্টো মারধরের পর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে এমনটিই অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী।
এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে গত শনিবার লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার শেখপুরা গ্রামে।
সন্তান ও সহধর্মিনী মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিলে চলে আসেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বড় মসজিদে। দিন বৃদ্ধ সৈয়দ আলীর স্থান হয় খোলা আকাশের নীচে মসজিদ চত্বর ও রাতে পার্শ্ববর্তী রজনীগন্ধা মার্কের গলিতে। টানা বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে না খেয়ে কাটে তার জীবন।
বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর। তারা হাজীগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সিফাত কে অবগত করেন।
স্থানীয় মোবাইল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন, ইকরাম ও বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান জানান, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সিফাত বৃদ্ধ সৈয়দ আলীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে রাতেই প্রায় ৫ঘন্টা চেস্টা চালিয়ে হাজীগঞ্জ পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে ওই বৃদ্ধকে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেন।
বৃদ্ধ সৈয়দ আলী জানান, অন্যের প্রথমে নৌকা পরে ভ্যান চালিয়ে দুই ছেলে নজরুল ইসলাম, নূর হোসেন ও দুই মেয়ে কুহিনূর ও কুলসুমাকে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকে ছেলেরা আলাদা সংসার করছেন। কিন্তু তাদের কেউই বাবার ভরণপোষণ দেন না। খুব কষ্টে অন্যের সহযোগিতায় নিজের খরচ চালাচ্ছিলেন। সন্তানদের ভরণপোষণের কথা বললে তারা কয়েকবার সৈয়দ আলীকে শারীরিক নির্যাতন করেন।
বড় ছেলের সোনাপুরে মুদি দোকান, ছোট ছেলে প্রবাসে থাকেন।
গত শনিবার দুপুরে বড় ছেলেকে কিছু মৌসুমি ফল খাওয়ার কথা বললে তার বাবাকে জানায়, ছেলেরা বাবার কোনো ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে পারবে না। এর প্রতিবাদ করলে নিজ সহধর্মিণী রুমেন্নেছা ও বড় ছেলে, ছেলের বউ মারধর করেন এবং বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। পরে সৈয়দ আলী ঘুরতে ঘুরতে হাজীগঞ্জে চলে আসেন।
ভুক্তভোগী বাবা বলেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। এখন কি আর শরীরে এত জোড় আছে কামাই করে খাবো। ছেলেদের কাছে তাই ভরণপোষণ চেয়েছি। আর তার জন্য এভাবে ওরা আমাকে মারবে? আমার বাড়ি থেকে আমাকেই বের করে দেবে, এটা মেনে নিতে পারবো না। আমি এর বিচার চাই।’
বড় মেয়ে কুহিনূর জানান, বাবাকে মারধর করা হয়নি। তিনি বিছানায় প্রস্রাব পায়খানা করে দেন। ভাইদের ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে, আত্মীয় স্বজন এই কারণে বাড়ি আসেননা। তাই আমরা বকা দিলে তিনি অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান।
ছোট মেয়ে কুলসুমার বড় ছেলে আল মাহমুদ রাছেল জানান, আমার নানাকে গত দুই দিন ধরে বহু জায়গায় খোজেছি। নানাকে কেউ নির্যাতন করে থাকলে আপনারা বিচার করিয়েন।
এবিষয়ে বড় ছেলে বাবাকে নিতে না আসলেও টেলিফোনে জানান, তিনি বিছানায় প্রস্রাব পায়খানা করে দিলে আপনি কি মানবেন? আমার একটা স্ট্যাটাস আছেনা। বাবাকে নিতে কেন আসেননি জানতে চাইলে বলেন এত সময় আমার নেই…
হাজীগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সিফাত বলেন, রামগঞ্জের ব্যবসায়ী, সামাজিক সংগঠনের কর্মী ও হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশিদের সহযোগীতায় বৃদ্ধ সৈয়দ আলীর বড় মেয়ে ও নাতিকে প্রায় ৫ ঘন্টা বোজানোর পর তারা নিতে আগ্রহী হন। আমি চাই যে সন্তানরা তাদের বাবাকে ভরণপোষণ দিতে পারে না, তাদের শাস্তি হোক।’
রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ হোসেন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’