শিরোনাম:
মতলবে পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম, মালামাল লুট মতলব দক্ষিণে পরিত্যক্ত রান্নাঘর থেকে মরদেহ উদ্ধার মতলব উত্তরে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ মিছিল মতলব দক্ষিণে ভেটেরিনারি ফার্মেসীগুলোতে অভিযান, চাঁদপুরে সম্পত্তিগত বিরোধ : হাতুড়ির আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু মতলবে সরকারি গাছ নিধন: বনবিভাগ-এলজিইডির দোষারোপে জনরোষ মতলব উত্তরে নিশ্চিন্তপুর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত মতলব সরকারি কলেজে নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত আমিরা বাজার থেকে লতিফগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা চাঁদপুর ২ আসনের বিএনপি নেতা তানভীর হুদার রাজনৈতিক প্রচারণায় ডিজিটাল যাত্রা, চালু করলেন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

মহান আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে একান্ত সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম হলো ইতিকাফ তথা মাহে রমজানের শেষ দশক

reporter / ৪৩০ ভিউ
আপডেট : বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩

মোঃ জাহিদুল ইসলাম ফাহিমঃ

ইতিকাফের কারণে পুরোটা সময় মসজিদে থাকার সুযোগ হয়। এতে করে এমন অনেক ইবাদত করার সুযোগ হয় যা সচরাচর অন্য সময় করা হয় না। ইতিকাফে বসলে একজন মানুষ বিশেষভাবে যেসব ইবাদতের সৌভাগ্য লাভ করে এখানে তুলে ধরা হলো-

নিরবচ্ছিন্ন ইবাদত ও আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম ইতিকাফ। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ ১০ দিনের এই আমলের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)

মাহে রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সপরিবারে প্রতিবছরই ইতিকাফ করেছেন এবং উম্মতকেও এর প্রতি উৎসাহিত করেছেন

একবার সাহাবাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। অতঃপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে।’ এরপর মানুষ তাঁর সঙ্গে ইতিকাফে শরিক হয়। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৯৪

ইতিকাফের বড় একটি উপকারিতা হচ্ছে, অধিক ইবাদতের সুযোগ পাওয়া। এ জন্যই আল্লাহর রাসুল (সা.) ইতিকাফের সময়গুলোতে ইবাদতের মাত্রা এত বেশি বাড়িয়ে দিতেন, যেমনটি অন্য সময় করতেন না।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী করিম (সা.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে  দিতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৫৩

আল্লাহ তায়ালার কাছে পৃথিবীর সব থেকে পচন্দের জায়গা হলো মসজিদ। মসজিদে মানুষ সব ধরণের পাপাচার থেকে দূরে থাকে এবং একনিষ্ঠ চিত্তে আল্লাহর ইবাদত করে থাকে। ইতিকাফের সময় মসজিদে আবস্থানের কারণে আল্লাহর ঘরের সঙ্গে মানুষের এক ধরণের ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ডেকে ডেকে বলবেন, আমার প্রতিবেশীরা কোথায়? আমার প্রতিবেশীরা কোথায়? তখন ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করবেন, আপনার প্রতিবেশী কারা? তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, যারা দুনিয়ায় আমার ঘরের সঙ্গে (মসজিদের সঙ্গে) সম্পর্ক রেখেছে এবং মসজিদ নির্মাণে ভূমিকা রেখেছে।’ (হিলয়াতুল আউলিয়া : ১০/২১৩)

আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যায়, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন। সকালে অথবা সন্ধ্যায় যতবার সে মসজিদে যায়, ততবারই আল্লাহ তায়ালা তার জন্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন। (সহিহ বুখারি, ৬৩১, সহিহ মুসলিম, ১৫৫৬, সহিহ ইবনে খুজাইমা, ১৪৯৬, সহিহ ইবনে হিব্বান, ২০৩৭)

লাইলাতুল কদর লাভের সুযোগ রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের বড় একটি উপকারিতা হচ্ছে লাইলাতুল কদর লাভের সুযোগ পাওয়া। আর লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে (লাইলাতুল কদর)।

আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৫)

হাদিস শরিফের বিভিন্ন ভাষা দ্বারা বোঝা যায়, উল্লিখিত আয়াতে মহিমান্বিত যে রাতের কথা বলা হয়েছে, তা এই শেষ দশকেই লুকিয়ে আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো।’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)

মসজিদে অবস্থান করলে মানুষ সাধারণত সব সময় ইবাদতের চেষ্টা করেন। আর লাইলাতুল কদর যেহেতু অনির্দিষ্ট, তাই ইবাদত-বন্দেগীতে থাকার কারণে মহিমান্বিত এই রজনীর বরকত লাভের সুযোগ হতে পারে সহজেই।

ইতিকাফের বড় একটি উপকারিতা হচ্ছে অনর্থক কথা-কাজকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখা। কারণ অনর্থক কথা-কাজ মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা বা কাজ ত্যাগ করা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৮)

একজন মুমিন বান্দা সব সময় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। তবে অনেক সময় পাপের অনুকূল পরিবেশ, অসৎসঙ্গের প্রভাব ও শয়তানের সার্বক্ষণিক প্ররোচনায় গুনাহমুক্ত থাকা সম্ভব হয় না। কিন্তু ইতিকাফের সময়গুলোতে সৎসঙ্গ ও ইবাদতের পরিবেশ থাকায় খুব সহজেই সে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে। এক বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি মুমিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেজগার লোকে খায়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩২)

লেখকঃ সাংবাদিক  মোঃ জাহিদুল ইসলাম ফাহিম

সহকারি শিক্ষক, খাতুনে জান্নাত ফাতেমা রাঃ মহিলা দাখিল মাদরাসা 

ও ফরিদগঞ্জ  উপজেলা প্রতিনিধি,দৈনিক প্রিয় চাঁদপুর 


এই বিভাগের আরও খবর