শিক্ষক যখন তেঁতো হয়

reporter / ৩০৯ ভিউ
আপডেট : রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩

মাহবুব আলম প্রিয়
_______________________
আমার কিছু শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা আসে না। কারন, কিছু অংক আর ইংরেজি শিক্ষক শেখায় যারা প্রাইভেট পড়ে তারা তাদের প্রিয়। যাদের অভিভাবক পিঠা,আমসহ নানা মুখরোচক খাবার স্যারের জন্য পাঠায় সে ছাত্র তাদের প্রিয়।
আবার কিছু শিক্ষক তার ছাত্র ছাত্রীকে নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শে গড়তে চায়। কেউ চায় নিজের পীরের মুরিদ করতে।
 আমারও আছে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার ঝুলি। এক শিক্ষক একটি দলের রাজনীতি করতেন। তিনি একবার আমাদের ক’জনকে মিছিলে নিলেন। সভায়ও নিলেন।  বড় নেতার সনে স্যারের কর্মী হিসেবে পরিচয় করালেন। একদিন গোঁপন মিটিং এ বসলেন। নেতায় স্যারকে বললেন, দলের জন্য কাজ করেন, অমুকের বাড়িতে হামলা করেন ‘লাগলে গান মেশিন পাবেন’।
সেদিন এ কথা শুনার পর থেকে ঘৃণা আসে রাজনীতিতে। থুথু ফেললাম মনে মনে। স্যারকেও আর ভালো লাগলো না। তবুও একই স্যার নিয়ে গেলেন তার পীরের কাছে। দেখলাম বিশাল খানকা নামীয় আস্তানা। লম্বা সিরিয়াল করে দেখা করছে মুরিদরা। স্যার আমাকেসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে গেলেন পীরের খাস কামরায়। দেখলাম বৃদ্ধ মুরিদরা পীরের বিছানো পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি চুষছেন ললিপপের মতো।  হাত পা টিপে দিচ্ছে কেউ কেউ। কে কি নাজরানা নিলো তা একে একে গ্রহণ করছেন পীরের খাদেম। গরু,মুরগী, গলার হাড়ও আছে নাজরানায়। আমি এসব চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম। এতোক্ষণে আমাকে পরিচয় করালেন স্যার। বললেন মেধাবী ছেলে তাকে হুজুর আমাদের গাইড করলে সে আরও লোক এ দরবারে নিয়ে আসবে। হুজুর আমার প্রতি যেন রাগ করে আছেন।এটা বুঝলেন স্যার। তিনি বললেন, হুজুরকে পা ছুঁয়ে সালাম কর গাধা! ওনি রাগ করলে তোর জীবন বরবাদ হয়ে যাবে৷ আমি স্যারের সামনে ভয়ে হুজুরকে(পীর) বললাম, আমাকে দোয়া করবেন হুজুর৷ পা ছুঁইলাম না বিষয়টা পীর সাহেব বুঝতে পেরে স্যারকে বললেন, তাকে প্রতি সপ্তাহে একবার নিয়ে আসো।  সব ঠিক হয়ে যাবে।
পরবর্তীতে আরও দুএকবার স্যারের সাথে গেলাম দরবারে।  দেখলাম, দরবারের নামে মুরিদদের কাছ থেকে ওঠানো নাজরানা নিজেরা ভাগ করে বাকিটা দরবারে জমা দিতে। দরবারের আরও নানা ভন্ডামীগুলো দেখার পর ওই স্যার আর দরবারকে চিরতরে বিদায় জানালাম মন থেকে।
গরীব ঘরের ছাত্র হলে কিছু শিক্ষকরা খুব ভালো চোখে দেখেন না৷ তার প্রমাণও আমি।  আমার বাবার জমি ছিলো কিন্তু নগদ অর্থ ছিলো কম। কৃষক বাবা আমাকে লেখা পড়া করাতে বড় অংকের খরচ যোগাতে গেলে বাগানের পুরনো গাছ, বহু বাঁশ, খেতের ফসল বিক্রি করতেন। মাঝে মাঝে গাছের জন্য মায়া হতো৷ বড় হওয়ার পর নিজেই আয়ের পথ বেছে নিয়েছি। কিন্তু দেখতাম শিক্ষকরা কিছুটা নির্দয় ছিলেন। যদি বলতাম ফি কমান।তখন শিক্ষকের ধমক খেতাম। অথচ সরকারি ফি যা তার ১০ গুন বেশি ধার্য্য করতেন। এসব কারনে বহু সহপাঠীকে ঝড়ে পড়তে দেখেছি। বাল্য বিয়ে হতে দেখেছি। গ্রামের পোলা তো, ৯০ দশকের পরিস্থিতিটা বুঝি।
সে সময় প্রতিষ্ঠান প্রধানরা যা শেখাতেন তা হলো, স্বার্থ একা একা আদায় করতে হয়। খরচ কমানোর দাবী দল বেঁধে নয়,গোঁপনে কমাতে হয়, যাতে অন্যদের কাছ থেকে বেশি আদায় করতে সহজ হয়। এমনটাকে ভদ্রপাড়ায় প্রতারনা বলে। তাই আমার ওই শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা নাই।
কিছু স্যার প্রাইভেট পড়াতেন। বড় মেয়েদের গালে ধরতেন। তাদের পিঠে খালি হাতে শাসনের নামে মারতেন। আর ছেলেদের তাচ্ছিল্য করতেন। লুচ্চামি আর কারে কয়? আরও নানা যৌন নিপীরনের কথাও জানি। ওইসব স্যারের প্রতি আমার বিন্দু পরিমান শ্রদ্ধা নাই৷
কিছু স্যার কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় নকল বিলিয়ে সরাসরি নিজের প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষার নামে প্রকাশ্যে চুরিকে প্রশ্রয় দেন। এতে ছাত্র ছাত্রী শিখে ‘চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা যদি তা ধরা না পরে’। আর শিখে প্রতারনা কৌশল। এটা কখনো সুশিক্ষা হতে পারে না।
সংবাদ কর্মী হওয়ার পর বুঝলাম স্যারদের মাঝে প্রধানগণ কিভাবে সরাসরি দূর্ণীতিতে জড়ায়। দূর্ণীতি কম বেশি ৯০ ভাগ লোকজনই করে। তবে শিক্ষক ইমাম ঠাকুর ফাদাররা করলে তো কথা হবেই।কারন তারা দূর্ণীতি মুক্ত করনের শিক্ষা দেয় আর তারাই যদি এসব করে তবে কে মানবে? তাদের অনেকে কর্তাদের ম্যানেজের নামে সরাসরি ঘুষে জড়িয়ে যায়। এ ঘুষ আদায় হয় সরাসরি ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে। নানা ফি এর নামে।
বলা হয়ে থাকে ‘ সাদা কাপড়ে দাগ বেশি বুঝা যায়’। শিক্ষকদের সাদা মনের সাদা পোষাকের লোক বলেই সমাজ জানে। আমরাও বুঝি।তাই  শিক্ষকরা এমন কাজে যুক্ত থাকলে কথা হতেই পারে।
দুঃখজনক সত্য যে, পরীক্ষায় নকলের সহায়তার জন্য ট্যাগ অফিসারসহ যারা প্রতিবাদ করতে যায় তাদের থামিয়ে দিতে খাম উপহার দেয়ার কাজটাও তেনারা করেন। শিক্ষার নামে যারা কুশিক্ষা দিচ্ছেন তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা নাই।
হুম, আমি চিরঋণী। শ্রদ্ধা তাঁদের প্রতি।    যারা বিনা স্বার্থে আমাকে সুশিক্ষা দান করেছেন। আমি সব অভিজ্ঞতা থেকে সুশিক্ষা অংশকে মনে প্রাণে মানি। যদিও সুনাগরিক, সুজন হওয়ার দাবীদার শতভাগ করতে অন্তর কাপে। ভুলে ভরা জীবন নিয়ে মন্দের ভালো হয়ে থাকি।
আমি শ্রদ্ধা ভরে স্মরন করি সেইসব শিক্ষকদের। যারা আমাকে শিখিয়েছেন। শাসন করেছেন অন্যায় থেকে বাঁচতে। নামাজের জন্য পিঠায়েছেন। পরিচ্ছন্নতার জন্য লাঠি দিয়েছেন। বাংলা ভাষাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। দেশকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন।  নিজেকে ভালো হতে শিখিয়েছেন।  আচরন ভালো করতে নীতি নৈতিকতা শিখিয়েছেন। কর্ম দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছেন। পথ দেখিয়েছেন। যারা আজও দোয়া করেন আমার জন্য। আমি তাঁদের কাছে ঋণি।  শ্রদ্ধা ভক্তি সবটা তাদের চরনে।
লেখক: মাহবুব আলম প্রিয়
সাংবাদিক
নাগরিক টিভি ও দৈনিক খোলা কাগজ


এই বিভাগের আরও খবর