শিরোনাম:
মতলবে পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম, মালামাল লুট মতলব দক্ষিণে পরিত্যক্ত রান্নাঘর থেকে মরদেহ উদ্ধার মতলব উত্তরে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ মিছিল মতলব দক্ষিণে ভেটেরিনারি ফার্মেসীগুলোতে অভিযান, চাঁদপুরে সম্পত্তিগত বিরোধ : হাতুড়ির আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু মতলবে সরকারি গাছ নিধন: বনবিভাগ-এলজিইডির দোষারোপে জনরোষ মতলব উত্তরে নিশ্চিন্তপুর ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত মতলব সরকারি কলেজে নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত আমিরা বাজার থেকে লতিফগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা চাঁদপুর ২ আসনের বিএনপি নেতা তানভীর হুদার রাজনৈতিক প্রচারণায় ডিজিটাল যাত্রা, চালু করলেন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

দীর্ঘ দুই মাস পর—মধ্যরাত থেকে মাছ শিকারে মেঘনা নদীতে নামবে জেলেরা

reporter / ৩৪৭ ভিউ
আপডেট : রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দীর্ঘ দুই মাস বন্ধ থাকার পরে আজ শেষ হচ্ছে দুই মাসের জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা। ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকায় দু’মাসের (মার্চ-এপ্রিল) মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। রোববার (৩০ এপ্রিল) রাত ১২টার পর শেষ হবে এ নিষেধাজ্ঞা। রোববার মধ্যরাত থেকে জেলেরা মাছ ধরতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইতিমধ্যে জাল আর নৌকা মেরামতের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা। কাঙ্ক্ষিত মাছ শিকারে পরিবারের অভাব দূর করার আশায় বুক বাঁধছেন চাঁদপুরের অর্ধলক্ষাধিক জেলে।
মৎস্য কর্মকর্তা ও গবেষকরা বলছেন, পরিকল্পিত অভিযানের কারণে এ বছর জাটকার প্রাচুর্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে নদীতে। এর ফলে ইলিশ উৎপাদনের ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী তারা। শুধুমাত্র চাঁদপুরেই ইলিশের ৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা রয়েছে।
রূপালি ইলিশ শিকারে নদীতে নামতে আর তর সইছে না জেলেদের। তাই নিষেধাজ্ঞার শেষ সময়টাতে জাল আর নৌকা মেরামতে ব্যস্ত সময় কাটছে চাঁদপুরের জেলেপল্লীগুলোতে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার সাখুয়া গ্রামের জেলে হাসান বেপারী। নিজের জমানো পুঁজি আর এনজিও ঋণ মিলিয়ে ৭ লাখ টাকায় তৈরি করেছেন মাছ ধরার নৌকা ও জাল। দুই মাসের অভিযানে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বেড়েছে ঋণের বোঝা। একটি ইলিশও যেন না ছুটতে পারে, সে জন্য জাল সেলাই করে নিচ্ছেন ভালোভাবে।
হাসান বেপারী বলেন, ৯ জন ভাগিদারসহ নৌকায় মাছ শিকারে জীবিকা নির্বাহ করি আমরা। নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে সরকারি চাল সহায়তা পেলেও সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। আশা করি নদীতে মাছ শিকার করে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারব।
গত ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ এপ্রিল। এই দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকাসহ দেশের ৫টি অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। ২০০৬ সাল থেকে জাটকা রক্ষায় এই কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে।
নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে অনেক কষ্টে কেটেছে জেলেদের জীবন। সংসার চালাতে গিয়ে মহাজন, দাদনদার আর বিভিন্ন এনজিওর ঋণে জর্জরিত তারা। নদীতে মাছ ধরে শোধাবে এ সকল ঋণের বোঝা। সংসারে ঘুরবে স্বচ্ছলতার চাকা- এমনটাই প্রত্যাশা জেলেদের।
সদরের আনন্দ বাজার এলাকার জেলে ইদ্রিস মিয়া বলেন, আমরা অভিযান পালন করলেও অনেক জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্বিচারে জাটকা শিকার করেছে। তাই সামনের দিনে নদীতে বেশি ইলিশ নাও পাওয়া যেতে পারে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আগামীতে অভিযান আরো কড়াকড়ি করার দাবি জানাই।
জেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, নিষেধাজ্ঞাকালীন নদীতে সাত শতাধিক অভিযান চালিয়ে ৮১ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, প্রায় ৪০ মেট্রিক টন জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রায় ৪ শ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ সময় চাঁদপুরে নিবন্ধিত ৪৪ হাজার ৩৫ জন জেলের মধ্যে ৪০ হাজার ৫ জন জেলেকে নিষিদ্ধকালীন ৪০ কেজি করে ৪ মাস চাল দেওয়া হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, পরিকল্পিত অভিযানের কারণে অভয়াশ্রম কর্মসূচি সফল হয়েছে। নদীতে প্রচুর পরিমাণ জাটকা বিচরণ করেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৫ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫ শ মেট্রিক টন হলেও এবার তা ৬ লাখ মেট্রিক ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে চাঁদপুরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার মেট্রিক টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৬ হাজার মেট্রিক টনে। চলতি মৌসুমে অতীতের সকল রেকর্ড ছাপিয়ে চাঁদপুরে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। এতে করে চাঁদপুরে বাজারে ইলিশের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুর নদীকেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, অভয়াশ্রমে নদীতে জাটকা বৃদ্ধির পাশাপাশি পানির গুণগতমান ভালো থাকায় আগামীতে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। দেশের এই মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় সকলকে আরো বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাই।


এই বিভাগের আরও খবর