আনোয়ার হোসেন মানিক /শাহপরান সৈকতঃ
চাঁদপুরে কথিত ডাক্তার আর কবিরাজের অপচিকিৎসায় প্রতিবন্ধী শিশুর হাতে পচন ধরেছে। তাদের এ অপচিকিৎসায় আরাফাত হোসেন (১০) নামের বাক প্রতিবন্ধী শিশুটির পচনকৃত ভাঙ্গা হাতের দুইটি আঙ্গুল ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে হাতটি কেটে ফেলা ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে শিশুটি রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সূত্রে জানা যায় গত বছরের ৩রা ডিসেম্বর স্বজনরা শিশুটিকে প্রথমে হাজীগঞ্জ বাজারের ডিগ্রি কলেজ রোডস্থ জান্নাত ফার্মেসীর কথিত ডাক্তার মো. আলাউদ্দিনকে দেখায় । ব্যবস্থাপত্রে (প্রেসক্রিপশন) দেখা যায় তিনি তার যোগ্যতা হিসেবে ডি.এম.এফ (ঢাকা), বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ। এক্স.এফ.টি (জেনারেল হাসপাতাল, কুমিল্লা), জেনারেল ফিজিশিয়ান, বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশন নং- ডি-২০৭৩৯ উল্লেখ করেছেন।
এর কয়েকদিন পরে চাঁদপুর সদরের মৈশাদী হাড় ভাঙ্গা চিকিৎসক কবিরাজ মো. সিরাজ মেম্বারের কাছে নেওয়া হলে সেখানে ৫ দিন থাকার পর শিশুটির অবস্থা বেগতিক হলে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করায় স্বজনরা।
ডাক্তার আর কবিরাজের বিরুদ্ধে স্বজনদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিশু আরাফাত একজন বিশেষায়িত প্রতিবন্ধী। গত ৩রা ডিসেম্বর অসাবধনাতবশত তার হাত ভেঙ্গে যায়। আর্থিক সমস্যার কারনে হাসপাতালে না নিয়ে হাজীগঞ্জ বাজারস্থ ডিগ্রি কলেজ রোডে জান্নাত ফার্মেসিতে নিয়ে আসলে মো. আলাউদ্দিন নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে শিশুটিকে চিকিৎসা সেবার নামে অপচিকিৎসা দেন। এতে করে শিশু আরাফাতের অবস্থা ক্রমশই খারাপ হয়ে গেলে তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে নেয়া হয়।
শিশু আরাফাত হোসেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং পূর্ব গুপ্টি ইউনিয়নের মানুরী গ্রামের নোয়া বাড়ির ইটভাটার শ্রমিক মো. হাছান মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় একটি মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। গত ৩রা ডিসেম্বর শিশুটি খেলতে গিয়ে তার হাত ভেঙ্গে ফেলে। এরপর হাজীগঞ্জ বাজারে কথিত ডাক্তার আলাউদ্দিনের কাছে আনলে তিনি ভুলভাল চিকিৎসা দিয়ে ছেলেটিকে ঢাকায় রেফার করে।
এই ঘটনায় শিশুটির বাবা মো. হাছান মিয়া ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারনে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস. এম সোয়েব আহমেদ চিশতীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বর্তমানে শিশুটির হাতের দুটি আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছে এবং সম্পূর্ণ হাত কেটে ফেলার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকগণ। তাই তদন্তপূর্বক যথাযথ আইনুনাগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে তারা অভিযোগ দায়ের করেন।
এ দিকে শিশুটিকে জান্নাত ফার্মেসিতে চিকিৎসার দেয়ার পর বাড়িতে নিয়ে আসলে অসহ্য ব্যথার কারনে ৫ ডিসেম্বর ব্যান্ডেজ খুলে দেন তার চাচাতো ভাই কামরুজ্জামান কায়েসসহ শিশুর পরিবারের লোকজন। এরপর তাকে চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাইদ গ্রামের কথিত কবিরাজ সিরাজ মেম্বারের কাছে নেওয়া হলে কবিরাজ তাকে পাঁচদিন তার বাড়িতে রেখে চিকিৎসা নামের অপচিকিৎসা দেন। সেখানেও শিশুটির অবস্থা উন্নতির দিকে না গিয়ে দিন দিন অবনতি দেখা দিলে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
শিশুটিকে চিকিৎসা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মো. আলাউদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে জানায় আমার কাছে নিয়ে আসার পর আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শিশুটিকে কুমিল্লা রেফার করি। কিন্তু শিশুটিকে কুমিল্লা না নিয়ে মৈশাইদ এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যায় তার পরিবারের লোকজন। অথচ তারা এখন উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস. এম সোয়েব আহমেদ জানান, বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের (সিভিল সার্জন) সাথে কথা বলেছি এবং তদন্ত করা হচ্ছে। পরবর্তীতে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার দৈনিক প্রিয় চাঁদপুর কে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে কথা বলেছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।