মোঃ জাহিদুল ইসলাম ফাহিম : ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্কাউটস সম্পাদক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক লুটপাট ও নানামুখী অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বছরের দুই ঈদকে সামনে রেখে স্কাউট ও রোভার সদস্যদের সড়কের যানজট নিরসনে কাজ করা শিক্ষার্থীদের জন্য নাস্তা ও দুপুরের খাবার বাবদ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অনুদানের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ও উপজেলা স্কাউট অফিসে ভুয়া বিল ভাউচার করে অর্থ লুটতরাজ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে স্কাউট ও রোভার সদস্যদের যানজট নিরসনে কাজ করা বাবদ নাস্তা ও দুপুরের খাবারের জন্য ফরিদগঞ্জ পৌরসভা ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আসা অনুদানের মধ্যে মোট অনুদানের প্রায় অর্ধেক সমপরিমাণ অর্থ সাঁইত্রিশ হাজারেরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করার দৃশ্যমান প্রমান রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য অভিযুক্ত এই উপজেলায় স্কাউট সম্পাদকের একদিনের ১১০০ টাকার ভুয়া আচারের ভাউচার ও ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে ২৬৫০ টাকা ও তার পরের মাসে ১৬০০ টাকার বিস্কুটের ভৌতিক বিল বানানোর অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এই দুটি ভাউটারের একটি টাকাও না খরচ করার অভিযোগ ওই সময়ে স্কাউটিংয়ে সক্রিয় থাকা স্কাউট সদস্যদের।
উপজেলা স্কাউটস সম্পাদকের এমন অনিয়মের অভিযোগ সামনে আনা রোভার স্কাউট সদস্য রেদওয়ান খাঁন জানান, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে না খেয়ে সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা শিক্ষার্থীদের জন্য নাস্তা ও দুপুরের খাবারের টাকাতে সে অনিয়ম করে ভাগ বসিয়েছে। এছাড়া ভিত্তিহীনভাবে বহু বিল-ভাউচার তৈরি করেছেন যার দৃশ্যমান কোন কাজই হয়নি। তার নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলার পর থেকেই বিভিন্ন মহলের ভিন্ন জনকে মাধ্যম করে ঘটনাটি ধামা-চাপা দেয়ার চেষ্টা করার পাশাপাশি উল্টো আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়ার এমনকি গ্রেপতার করানোর হুমকিও দিয়েছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে। অনিয়ম যেই করুক কোনভাবে অন্যায়কারীকে ছাড় দেওয়া হবে না। একজন অপরাধীর বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত তৈরি করে উপজেলা স্কাউটসকে দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ রাখার জন্যই আমারা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছি।
এবিষয়ে উপজেলা স্কাউটস কমিশনার হাসিনা আক্তার জানান, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই উপজেলা স্কাউটসের দায়িত্বশীলদের আমি বারংবার বলেছি, সর্বোচ্ছ সচেতনতার সাথে স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করতে। সাম্প্রতি সম্পাদকের বিরুদ্ধে যেসকল অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সাংগঠনিক নিয়মানুযায়ী তদন্তপূর্বক সে অপরাধী প্রমানিত হলে, তবে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত তৈরি করা হোক। যাতে সামনের দিনগুলোতে স্কাউটিংকে পুজি করে আর কেউ অনিয়ম করার দুঃসাহস না পায়৷।
এ বিষয়ে মেঘনা পাড় মুক্ত স্কাউটস গ্রুপের ইউনিট লিডার জাহিদুল ইসলাম ফাহিম জানান, উপজেলা স্কাউটস সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উপজেলার সক্রিয় স্কাউট সদস্যদের ভিন্ন সময়ে নানাভাবে হেয় পতিপন্য করেছেন। “কোত্তা গায়ে দেওয়া স্কাউট” সহ এমন নানা কুরুচিপূর্ণ কথা বলে হেয় পতিপন্য করতেন স্কাউট ও রোভার সদস্যদের। এছাড়া উপজেলা স্কাউট সম্পাদক বিভিন্ন প্রোগ্রামের নামে ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয়টি এখন প্রমানিত। অচিরেই দুর্নীতিবাজ এই স্কাউট সম্পাদকের অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
উপজেলা স্কাউট সম্পাদক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্তপূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য গত ৪ সেপ্টম্বর স্কাউট ও রোভার সদস্যরা ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্কাউটের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌলি মন্ডলের কাছে স্মারলিপি প্রদান করলেও এবিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন কিংবা কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
অভিযুক্ত স্কাউট সম্পাদক জিয়াউর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি কুচক্রী মহল ভিন্ন উদ্দেশ্যে কয়েকজন স্কাউট ও রোভারকে আমার বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে তাদের পরিচালিত করছে৷
অভিযুক্ত স্কাউট সম্পাদক জিয়াউর রহমানের অপসারণ ও তার শাস্তির দাবিতে ৮ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা চত্বর সমুক্ষে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিটের স্কাউট, রোভার সদস্য ও শিক্ষার্থী সমাজ মানববন্ধন আয়োজনের ডাক দিয়েছেন।