শিরোনাম:
বিদ্যালয়ে পিয়ন থাকলেও শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে মাঠ পরিস্কার করাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক ফরিদগঞ্জে ইংলিশ ডোরের উদ্বোধন ফরিদগঞ্জে ফারিসা’র নয়া কমিটি সভাপতি মোতাহার হোসেন, সম্পাদক মহেশ শর্মা চাঁদপুরে এসএ টিভির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন চাঁদপুরে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে আলোচনা সভা অসহায় শীতার্ত মানুষদের শীতবস্ত্র উপহার দিল চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স মতলব উত্তরে সাজাপ্রাপ্ত ২ আসামী গ্রেফতার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বিক্রি বাড়াতে খুশি ক্ষূদ্র উদ্যোক্তারা রূপগঞ্জে যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতারের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ নাজিরপাড়া ক্রীড়া চক্রের অভিষেক ও পরিচিতি সভা

চাঞ্চল্যকর ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাওয়ের ঘটনায় গ্রাহকের আহাজারি

reporter / ১৬২ ভিউ
আপডেট : মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার মেহার কালীবাড়ি বাজারে অবস্থিত ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট গ্রাহকদের ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও হওয়ায় গ্রাহকের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এই সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় গতকাল ৭ ফেব্রুয়ারী  ভুক্তভোগীরা ঐ এজেন্ট শাখায় এসে বিক্ষোভ করে। ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানান, তাদের সঞ্চয়পত্রের টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে এশিয়া ব্যাংকের কালিবাড়ী বাজারের এজেন্ট হৃদয় চন্দ্র পাল উধাও হয়ে যায়। এশিয়া ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা টাকার সঠিক তথ্য উদঘাটনে তদন্ত করছেন।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়, শাহরাস্তি থানা কমপ্লেক্সের পাশেই অবস্থিত শাহরাস্তি পোস্ট অফিসের নতুন ভবনের কাজ শুরু হওয়ায় মেহার কালিবাড়ী বাজারে ঐ ব্যাংকের এজেন্ট অস্থায়ীভাবে ব্যাংক এশিয়ার অফিসের একই কক্ষে বিগত কয়েক মাস ধরে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চলে আসছে।
হৃদয়ের সহকর্মী পারভীন আক্তার জানান, আমার জীবনে এই চাকুরিই প্রথম। স্যার যা বলতেন আমি তাই করতাম। খোয়া যাওয়া টাকার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
   শাহরাস্তি পোস্ট মাস্টার মোঃ মজিবুর রহমান জানান, ব্যাংক এশিয়ার সাথে পোস্ট অফিসের উদ্যোক্তা চুক্তি রয়েছে সেই কারণে একই অফিসে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি জানান, আমার কাছে চেকের কোন কাজ নেই। সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে হলে (এম আই সি আর) চেক থাকতে হয়। ঐ ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে আমাকে চেক জমা দিতে হয়। এই চেক কালেকশনের জন্য আমি প্রধান ডাকঘরে পাঠাই। তিনি জানান যেহেতু ব্যাংক এশিয়া এমআইসিআর চেক দিতে পারে তাই এজেন্ট শাখায় গ্রাহকগন এ কাজটি করেছে। গ্রাহকদের অভিযোগ এজেন্ট হৃদয় চন্দ্র পাল জাল-জালিয়াতির করে ভুয়া রিসিটের মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা তার নিজের একাউন্টে জমা নেয়।
    বিষয়টি জানাজানি হলে বিগত ১ ফেব্রুয়ারী বুধবার ব্যাংক এশিয়ার কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গ্রাহকদের ৪০ লক্ষ টাকা ২ ফেব্রুয়ারি ও ৫ ফেব্রুয়ারি ২০ লক্ষ টাকা করে ২ কিস্তিতে পরিশোধ করবে বলে হৃদয় চন্দ্র পাল অঙ্গীকার নামা দেয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই হৃদয় তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজ এলাকা থেকে উধাও হয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে ৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল থেকে গ্রাহকরা এজেন্ট শাখায় জড়ো হতে থাকে। এসময় বেশ কয়েকজন দাবি করেন তাদের  প্রায় কোটি টাকার অধিক অর্থ নিয়ে হৃদয় উধাও হয়ে যায়। উপস্থিত গ্রাহকদের মধ্যে অফিস চিতোষীর মরিয়ম আক্তারের ১০ লক্ষ্য টাকা, নিজ মেহার গ্রামের আব্দুল মালেকের ৯ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা, পদুয়া গ্রামের ইয়াছিনের ৫লক্ষ টাকা, কচুয়া উপজেলার সোরাইস গ্রামের সুচিত্রার ৬ লক্ষ টাকা, হাজেরা খাতুনের ৩ লক্ষ, ঝর্ণা আক্তারের ২ লক্ষ, রোজিনা বেগমের ২ লক্ষ, মামুন হোসেনের ১৫ লক্ষ, মোঃ জহির হোসেনের ৮ লক্ষ ২০ হাজার, সুরাইয়ার ২ লক্ষ ৫০ হাজার, সালেহা বেগমের ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়েছে বলে তারা দাবি করেন। এছাড়াও আরও বেশ কিছু গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় হৃদয়।
গতকাল ৭ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারো ঘটিকায় কালীবাড়ি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় গিয়ে দেখা যায় প্রতারিত গ্রাহকগন ভিড় করছে তাদের টাকা ফিরে পেতে। এসময় প্রতারিত গ্রাহকগন টাকা ফিরে পেতে আহাজারি করছে। এক পর্যায়ে প্রতারিত গ্রাহকগন বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় সংবাদকর্মী এসেছে শুনে তারা তাদের টাকা ফিরে পাওয়া দাবি জানায়। এসময় ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া কেউ একজন তাদেরকে বের করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। এসময় উপস্থিত প্রতারিক গ্রাহকদের কেউ কেউ হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়।
এবিষয়ে শাহরাস্তি উপজেলায় থাকা ৭টি এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের তদারকের দায়িত্ব প্রাপ্ত বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার মোঃ সাব্বির আহম্মেদ প্রথমে তথ্য সরবরাহ করতে অস্বীকার করে। পরবর্তীতে কৌশল অবলম্বন করে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা এজেন্ট হৃদয় চন্দ্র পাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়ে গেছে বলে তথ্য পেয়েছি। তদন্ত চলছে। আরও টাকার গড়মিল আছে কি-না তার জন্য কাজ করছি। তদন্ত শেষ না হওয়ার পূর্বে সঠিক অংক বলতে পারবো না।
এদিকে ব্যাংক এশিয়ার চাঁদপুর জেলা ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি জানার পর থেকেই আমাদের তদন্ত কাজ চলছে। কতো টাকা নিয়ে হৃদয় জালিয়াতি করেছে তা তদন্ত শেষে বলা যাবে। গ্রাহকগন যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।
৭ ফেব্রুয়ারী বিকাল সাড়ে তিনটায় প্রতারক হৃদয় চন্দ্র পালের গ্রামের বাড়ি পাল বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার বাড়ির সামনের ফটক ভিতর থেকে বন্ধ এবং পিছনের দরজায় তালা আটকানো। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক বাড়ির এক বাসিন্দা জানান, গত তিনদিন থেকে বাড়ির পিছনের দরজায় তালাদিয়ে পরিবারের সকলে কোথায় গেছেন জানেন না।
এবিষয়ে শাহরাস্তি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোন অভিযোগ দায়ের করেননি।


এই বিভাগের আরও খবর