মাহবুব আলম প্রিয়ঃ
সারাদেশে তীব্র গরমে অসহনীয় দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। আকাশে মেঘলা বা কোথাও বৃষ্টি হলেও কমেনি গরমের তীব্রতা। আবার গরমের কারনে বাড়ছে রোগবালাই ও অসুস্থতা।
এমন চিত্র নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার।
স্থানীয় সরকারী ও বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ দিন ধরে চলা তীব্র গরমে ইতোমধ্যে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। পাশাপাশি শ্বাসকষ্টজণিত রোগীসহ স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে গেলো কয়েকদিনে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীর ভিড় বেড়েছে কমপক্ষে চারগুণ।
চিকিৎসকরা জানান, জ্বর-বমি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। সেই সাথে বৃদ্ধদের বেড়েছে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি। তাই বেশি করে পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার সকালে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের ভিড়। কদিন আগেও জরুরি বিভাগে রোগী আসতো ২০ থেকে ৩০ জন। কিন্তু গত ১০ দিন ধরে ৫০ থেকে ১০০ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে।
এসব রোগীর মাঝে বেশিরভাগ শিশুই জ্বর, পাতলা পায়খানা ও বমির উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছে। তাদের জ্বরের পাশাপাশি শরীরে তৈরি হচ্ছে পানিশূণ্যতা।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নাজমুল আহমেদ বলেন, তীব্র তাপদাহ তার ওপর, এ সময়টা সাধারণ ভাইরাস জ্বরের মৌসুম। সেই সঙ্গে গরমজনিত কারনে অতিরিক্র ঘাম থেকে সর্দি কাশির মতো সমস্যা বাড়ছে।
সঙ্গে যোগ হয়েছে ডায়রিয়া। শিশুদের মধ্যে টাইফয়েড ও হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হবার সংখ্যাটাও বাড়ছে। তাই অবহেলা না করে শিশুদের চিকিৎসকের কাছে নেয়া জরুরি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, প্রচণ্ড গরমে বয়োজেষ্ঠ্যরা আছেন হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে। বিশেষ করে নানা রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধদের ঝুকিটা বেশি। এতে অনেক সময় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আইভী ফেরদৌস বলেন, অতিরিক্ত গরমে কাউকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখলে শুরুতেই তাকে আধা ঘণ্টা ঠাণ্ডায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি তাতে সুস্থ হয়ে যান, তাহলে বুঝতে হবে, অসুস্থতা গুরুতর নয়। এ সময় তিনি বলেন বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমে আসবে। তখন এ ধরনের রোগী কমে আসবে।
এদিকে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যু সমিতি ২ এর অধীনেও চলছে তীব্র লোডশেডিং। সারা দিনে ২ থেকে ৩ ঘন্টা পর পর ১ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে। বাকি সময় বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তি দেখা গেছে ঘরে বাইরে। হাটবাজারে জরুরী কাজের জন্য ফটোকপি কাজের জন্য ব্যবসায়ীরা জেনারেটর বসিয়েছেন। কিন্তু সেখানে পৃষ্ঠা প্রতি ২ টাকার পরিবর্তে ১৫ থেকে ২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এমন চিত্র উপজেলার মুড়াপাড়া বাজার ও রূপগঞ্জ সাবরেজিস্টার অফিসের সামনে। স্থানীয় ফটোকপিয়ার ব্যবসায়ীরা লোডশেডিং এর সুযোগে ফটোকপি কাজে গ্রাহকদের জিম্মি করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জিন্নাহ হোসেন জনি বলেন, দিনে-রাতে কয়েক দফায় ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং দেওয়া হয় এখানে। এতে তীব্র গরমে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে সকল বিদ্যুৎ গ্রাহকসহ শিক্ষার্থীরা।
উপজেলা বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, উৎপাদন ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মিলছে কম।
উপজেলার প্রায় এলাকায় দিনে অন্তত ৬ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে। লোডশেডিং সূচি বলে কিছু নেই। যখন খুশি তখন বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুতের এ অবস্থা চলছে। লোডশেডিং চলাকালে প্রচ- গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে কলকারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা গরমে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছে না।
এদিকে, সরকার গরমের তীব্রতা রোধে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধের ঘোষণা দিলেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী নিয়ে আসা জুলহাস মিয়া বলেন, হাসপাতালে আড়াই ঘণ্টায়ও একবার বিদ্যুৎ আসে না। জেনারেটরও চলে না। ফলে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ রোগীরা গরমে ছটফট করছেন।
মধুখালী এলাকার ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিরা তাসফি বলেন, ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছি না। পরীক্ষার আগে এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।
নারায়ণগঞ্জ পবিস ২ পূর্বাচল জোনাল অফিসের ডিজিএম লাবিবুল মোঃ বাশার বলেন, লোডশেডিং সমস্যা আমার এলাকায় একার নয়। সারাদেশেই সমস্যা। শীঘ্রই এর সমাধা হবে। গ্রাহকদের ধৈর্য ধরতে হবে। এ সময় তিনি বলেন, সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে গিয়ে এমন সংকটে পড়েছে।