মাহবুব আলম প্রিয়, রূপগঞ্জ:
শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল মেলা ঘিরে
এবার স্থান পেয়েছে সার্কাস। ফলে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীর দেখা
গেছে। অভিযোগ রয়েছে রাত ৯টার পর সার্কাসের শো তে অশ্লিল নৃত্য
দেখানোর। এতে পরিবার নিয়ে বিগত বছরের সার্বজনিন অংশ গ্রহণ
অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে । এতে সার্কাস শিল্পীরাও রয়েছে বিপাকে।
শারীরিক কসরত আর খেলা ধূলা বেষ্টিত সার্কাস হলেও কতিপয় অসাধুদের
দখলে চলে অশ্লিল নৃত্য। এছাড়াও রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের
আধিপত্য নিয়ে পাল্টাপাল্টি মেলার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ঘটনা। স্থানীয়দের
দাবী, শতবর্ষি মেলার আয়োজন নিরাপদ ও সকলের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা
প্রদানের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোলাকান্দাইল মেলার রয়েছে
অতীতের নানা স্মৃতি। প্রায় দেড়শত বছর ধরে চলে আসা আবহমান বাংলার
গ্রাম্য সব পন্য , বালিশ মিষ্টিসহ নানা সুস্বাদু খাবারের মেলা
হিসেবে রয়েছে সুনাম। প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও থাকাকালীন
এ অঞ্চলে মানবসভ্যতার শুরু। সে সময়ে এ অঞ্চলে বসবাসকারী হিন্দু
সম্প্রদায়ের প্রচলনে মাঘের শুরুতে হওয়া মেলা আজো চলছে বছর ঘুরে। এ
মেলায় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে আকর্ষণের
কেন্দ্রে। নানা জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা
হুমরি খেয়ে পরে মেলায়। তারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করেন এখান
থেকে। ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষের বিনোদনের এক সুবর্ণ সুযোগ
করে দিচ্ছে এ মেলা।
পাঁচাইখা এলাকার বাসিন্দা নুর শাহ বলেন, মেলায় অতীতে থাকতো
সার্কাস, যাত্রাপালা, পুতুলনাচ, যাদুসহ নানা আনন্দদায়ক
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। কিন্তু অশ্লিলতা নির্ভর হওয়ায়
প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর কারনে যাত্রাপালার আয়োজন এখন আর দেখা
যায় না। মেলাতে রয়েছে কাঠ, বাঁশ,বেত আর লোহার সামগ্রীতে ঠাসা।
পূর্বাচলের বাসিন্দা শরীফ মিয়া বলেন, গোলাকান্দাইল মেলার প্রধান
আকর্ষণ বালিশ মিষ্টি। বড় বড় কড়াইতে চিনির সিরায় ভেসে থাকা
রসগোল্লা দেখতে বালিশের মতো পাটা ও পুতা মিষ্টি। তৃপ্তি সহকারে
খাওয়ার জন্য এ মিষ্টির বিকল্প নেই। এক সময়ে এ অঞ্চলে প্রচুর মহিষ পালন
হতো। যদিও এখন মহিষের দুধের ছানা পাওয়া যায়না। পাশাপাশি মাটির
তৈরি নানা সরঞ্জামাদি শোভা বাড়িয়েছে এ মেলার। অন্যদিকে শিশুদের
জন্য নাগরদোলা। নারীদের জন্য কসমেটিকস সামগ্রী, তরুণদের জন্য
বাইকঘুড়ানো খেলা বেশ আকর্ষনীয়। অতীতে পহেলা মাঘ আয়োজিত
শতবর্ষী এ মেলাকে কেন্দ্র করে গোলাকান্দাইল এলাকায় চলতো আনন্দ যজ্ঞ।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের আধিপত্যের
কারনে মেলা বসাতে পারছিলেন না আয়োজকরা। তবে এ বছর মেলার
আয়োজন থাকায় খুশি স্থানীয়রা। মধুখালী এলাকার বাসিন্দা মাহিরা
তাসফি প্রভা বলেন, গোলাকান্দাইল মেলায় মেলায় সার্কাসে শিল্পিদের
নানা খেলাধূলা বেশ আকর্ষণীয়। তবে সবাইকে নিয়ে দেখার পরিবেশ
নাই। বিশেষ করে নারীদের জন্য ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী করে
কিশোরগ্যাংসহ আধিপত্য বিস্তারকারীরা। ফলে নিরাপদ পরিবেশের অভাব
রয়েছে।
মেলায় সার্কাসের শিল্পি চিত্র নায়ক পিচ্ছি সোহেল বলেন, চলচ্চিত্র
যেমন হলমুখী থেকে পিছিয়েছে। তেমনি সার্কাসের শিল্পিরাও তাদের
জীবিকা নির্বাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারন, মেলার আয়োজন
আগের মতো হয়না। আর হলেও অভ্যন্তরীন কোন্দল ও আধিপত্যের কারনে মেলার
স্থায়ীত্ব থাকেনা। এতে গ্রামীন মেলায় সার্কাসসহ বিনোদনের কর্ম
বাধাগ্রস্থ হচ্ছ্ধেসঢ়;।
ঢাকা সুইটস এন্ড বেকারীর মালিক আব্দুর রহিম বলেন, গোলাকান্দাইল
মেলার প্রধান আকর্ষণ আমাদের বালিশ মিষ্টি। এছাড়াও আশপাশের বহু
মিষ্টি তৈরীর কারিগররা অতীতের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বালিশ মিষ্টি তৈরী
করে বিক্রি করছেন। তবে এসবের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হক
বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতিতে ২০ দিনের জন্য গোলাকান্দাইল মেলায়
সার্কাস চলছে। এতে কোন প্রকার অশ্লিলতার অভিযোগ পেলে
তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখতে এলাকাবাসির
সমন্বয় জরুরী। কারন, মেলার মাধ্যমে গ্রামীন বিনোদনের উন্মুক্ত
প্রদর্শন হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য যে, এবারের মেলার আয়োজনের শুরুতে স্থানীয় ছাত্রলীগ সদস্যদের
দু পক্ষের আধিপত্ত বিস্তার নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা
ঘটে। এতে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের
কতিপয় লোকজন জোর করে সার্কাসে প্রবেশ , টিকেট ছাড়া সব
খেলায় তাদের স্বজনদের প্রবেশের কারনে সার্কাস ও অন্যান্য বিনোদন
সংশ্লিষ্টরা ভয়ে থাকেন। এসব ঘটনায় ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির
অসহযোগীতার অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশ্যে অনিচ্চুক মেলার
পসরা সাজানো ব্যবসায়ীদের একাংশ। তবে ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির
ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
মেলাকে শান্তিপূর্ণ করতে আমরা তৎপর।